আপডেট : ১৫ মার্চ, ২০২৩ ১৩:৩১
সরকারের পতন সময়ের ওপর ছাড়ল বিএনপি
আহমেদ দীপ্ত

সরকারের পতন সময়ের ওপর ছাড়ল বিএনপি

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই অনড় বিএনপি। তাদের দাবি, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন। ১০ দফা দাবি ও ২৭ দফা রূপরেখা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতনের হাঁকডাক দিচ্ছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া তাদের এখন মূল লক্ষ্য নয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো। আর সেটি করা হবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে অনেকটা দৃঢ় অবস্থান জানালেও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দলটির বক্তব্য হচ্ছে, সবকিছু ‘সময়ের ওপর নির্ভর করবে’।

গত বছরের আগস্ট থেকে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সরব হয়ে ওঠে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে দলটি। ওই দাবির সঙ্গে মিল রেখে দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির সমমনা দলগুলো। একই দিনে একই ধরনের কর্মসূচি নিয়ে গত তিন মাসে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন তৈরি করেছে দলগুলো। এসব কর্মসূচির দিনে পাল্টা শান্তি সমাবেশ নিয়ে রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপি ও তার যুগপৎ সঙ্গীদের কর্মসূচি থেকে সরকারের পদত্যাগের দাবি করা হলেও চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করছেন না তারা। তারা বলছেন, ধাপে ধাপে কর্মসূচি ও আন্দোলনের মাত্রা বাড়ানো হবে। সরকার যদি তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে তা হলে সময় ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে নতুন কর্মসূচি নেয়া হবে। সরকার এখন নির্বাচনের ধুয়া তুলে বিএনপি ও আন্দোলনের সঙ্গীদের দৃষ্টি সরাতে চায়। অতীতের মতো সরকারের কোনো ফাঁদে বিএনপি পা দিতে চায় না।

বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে অংশ নেয়নি তারা। একই সঙ্গে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন ১ বছর পার করলেও তাদের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি বিএনপি। পাশাপাশি আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ থেকে দলীয় সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছে। এ সবই সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ, যা ধাপে ধাপে আন্দোলনকে বেগবান করছে। এ বছরের মধ্যে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি দিলেও পদযাত্রা, মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে আটকে আছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

দলটির নেতারা সরকার পতনের ঘোষণা দিলেও তার রূপরেখা সম্পর্কে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। যুগপৎ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে বিএনপি ১০ দফা, গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা ও আন্দোলন সঙ্গীদের ঘোষিত দফাগুলোকে একত্রিত করে সমন্বিত ঘোষণার কথা ছিল। সে প্রক্রিয়াও আপাতত ঝিমিয়ে পড়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি। সে কথা আমরা বারবার বলেছি। এটিই আমাদের বক্তব্য। এমনকি বিএনপি ঘোষিত ১০ দফার প্রথমটিই হচ্ছে, সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ জাতীয় সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা। এগুলো হলেই আমরা নির্বাচনে যাব। ‘আওয়ামী লীগ কী বলল, না বলল, তাতে আমাদের এখন যায়-আসে না। যদি শেখ হাসিনার অধীনেই আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করে, তখন বিএনপি কী করবে তা নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে। সময়ই জবাব দেবে সবকিছুর।’

নির্বাচনের আগে দলের অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে একই সুরে কথা বললেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না এবং এই সরকারের অধীনে কোনো তামাশার নির্বাচনও করতে দেব না।’

সরকার যদি নির্বাচনের আয়োজন করে সেটি বিএনপি প্রতিহত করবে কি না- জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, ‘সেটা সময় বলে দেবে। আমাদের কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ আছে। বিএনপির পদযাত্রা, মানববন্ধনসহ যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিগুলোতে সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারের পতন, ক্ষমতার পালাবদল হোক, এটাই আমরা চাচ্ছি।’

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো চিন্তাই করছি না আপাতত। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য এখন একটাই- এই সরকারের পতন করাতে হবে। নির্বাচন কখন হবে, কী হবে, কে আসবে তা সরকার সরকারের মতো করে বলছে। আমরা সেটি নিয়ে চিন্তাই করছি না।

আগামী দ্বাদশ নির্বাচন-২০১৪ সালের মতো হবে নাকি, ২০১৮ সালের মতো হবে, নাকি তামাশার নির্বাচন হবে, সেসব নিয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি না।

গত ১৩ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভার্চুয়ালি সভা করে বিএনপি। সে সভায় আলোচনা শেষে ছয়টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘বর্তমানে অনির্বাচিত, দুর্নীতিপরায়ণ ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতির খতিয়ান জনসমক্ষে উন্মোচন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।’

এ বিষয়ে সেলিমা রহমান বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার গত ১৫ বছরে দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের নানাভাবে অনিয়মের সুবিধা দিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে দুর্নীতি হয়নি। এসব জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।’