বীর মুক্তিযোদ্ধা, অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছাড়াও তিনি উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশের মূল্যস্ফীতি, গ্রামীণ অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভসহ নানা বিষয়ে অর্থনীতিবিষয়ক লেখক এম এ খালেক-এর মুখোমুখি হয়েছেন।
এম এ খালেক: বিশ্বব্যাপী যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে তার কারণ কি এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির প্রভাব কীভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করেন?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বিশ্বব্যাপী যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে তার পেছনে প্রাথমিক দুটো কারণকে আমরা দায়ী করতে পারি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে করোনা অতিমারির প্রভাব। করোনা অতিমারির কারণে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমরা একই বিষয় লক্ষ করি। করোনার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। মানুষের আয়রোজগার কমে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনার প্রভাব কমে আসায় বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ঠিক সেই পর্যায়ে শুরু হয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়। করোনা অতিমারির সংক্রমণ থেকে বিশ্ব যখন পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় ছিল ঠিক তখনই শুরু হয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব অর্থনীতিকে আবারও সংকটে ফেলে দেয়। এই যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর জের এখনো বিশ্বকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
এম এ খালেক: চলতি অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কেমন হতে পারে বলে মনে করেন?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: করোনা অতিমারির পর আমাদের এখানে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া খুব ভালোভাবে শুরু হয়েছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪ শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাথমিক হিসাবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখানো হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তা ৭ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি বিকাশমান অর্থনীতি ৭ দশমিক ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যেকোনো বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে। করোনা শুরু ওয়ার আগে এক বছর আমরা ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। কাজেই আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনের হার প্রায় করোনার পূর্বাবস্থায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আবারও আমরা পিছিয়ে পড়েছি। চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে প্রাক্কলন আছে তা অর্জন করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে উন্নয়ন সহযোগীরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তা খুব একটা খারাপ নয়।
এম এ খালেক: গ্রামীণ অর্থনীতির যে নীরব রূপান্তর চলছে সে সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। সরকার গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছে। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশমান ধারায় প্রবহমান রয়েছে। আগামীতেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক অবস্থায় থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে একধরনের নীরব রূপান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকেই যুবক শ্রেণি কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছে। তারা দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। তাদের পাঠানো অর্থে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে। একসময় যারা গ্রামে দরিদ্র পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল আজ তাদের অনেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। শহরের সুবিধাদি এখন গ্রামীণ জনপদেও পাওয়া যাচ্ছে। সরকার শহরের সুবিধা গ্রামে নিয়ে যাওয়ার যে পরিকল্পনা করেছে তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আমাদের পণ্য রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। রেমিট্যান্সও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে আমি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়বে। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে উন্নত দেশের ভোক্তাগণ দামি পোশাকের পরিবর্তে তুলনামূলক স্বল্প মূল্যের তৈরি পোশাক ক্রয় করে। বাংলাদেশ তুলনামূলক কম দামি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। কাজেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমবে না। এবারও ঠিক সে কথাই আমি বলব। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে। রেমিট্যান্স বিনিয়োগে খুব একটা আসছে না। এগুলো মূলত ভোগ ব্যয়ে খরচ করা হয়। ভোগ ব্যয়ে খরচ বাড়লে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কাজেই এরও একটি ইতিবাচক দিক আছে। আমি মনে করি, চলতি অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করেছে তার কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে সত্যি কিন্তু অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি আমাদের আশান্বিত করে।
এম এ খালেক: বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে নেতিবাচক কথা শোনা যায়। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে মাঝেমধ্যেই নেতিবাচক কথা শোনা যায়। বলা হয়, রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। রিজার্ভ কমার অনেকগুলো কারণ আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারেও আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বেড়েছে। ফলে রিজার্ভ ব্যয় হচ্ছে বেশি। কিন্তু রিজার্ভ থেকে অর্থ ব্যয় করলেও রিজার্ভে নতুন করে অর্থ যোগ হচ্ছে। কাজেই রিজার্ভ নিয়ে নেতিবাচক চিন্তার তেমন কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না। প্রবাসী আয়, রপ্তানি আয় ইত্যাদি যাতে বৈধ পথে আসে সে ব্যাপারে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে রেমিট্যান্স যাতে বৈধ পথে দেশে আসে। পণ্য রপ্তানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ আমদানি ব্যয় হয়েছিল সাড়ে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বছর শেষে সেটা ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। কাজেই আমদানি ব্যয় অনেকটাই কমেছে। আগামীতে আমদানি ব্যয় আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমাদানি ব্যয় কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোক্রমেই যেন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি না কমে। এসব পণ্যের আমদানি কমলে দেশে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে, যা শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নষ্ট করে দারিদ্র্যবিমোচন প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করবে। অপ্রয়োজনীয় অথবা কম প্রয়োজনীয় অথবা আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনের সুযোগ আছে সেসব পণ্য আমদানি কমানো যেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জিত হচ্ছে। এসব বিবেচনায় আমি মনে করি, ২০২৩ সাল বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যতটা খারাপ হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল তা হবে না।
এম এ খালেক: আপনি রেমিট্যান্সের কথা বললেন। গত অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমতুল্য রেমিট্যান্স অবৈধ পথে দেশে এসেছে বলে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: গত বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ বিদেশে গেছে কর্মসংস্থানের জন্য। সব দেশেই যে উন্নয়নমূলক বন্ধ হয়ে গেছে অথবা কমেছে তা কিন্তু নয়। অনেক দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই হচ্ছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রধান গন্তব্য। সেখানে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। যারা বিদেশে চাকরি করেন তারা কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেন। তারা যদি ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে কার্ব মার্কেটে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বেশি অর্থ পান তাহলে অনেকের মধ্যেই কার্ব মার্কেটে মুদ্রা বিনিময় করবেন। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে তিন-চারটি রেট কার্যকর রয়েছে। মুদ্রা বাজারে তিন-চারটি বিনিময় হার থাকা উচিত নয়। আমি মনে করি,এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করে দেয়া উচিত। কার্ব মার্কেটের বিনিময় হার বেশি হতে পারে, তবে তা কোনোভাবেই এক বা দুই টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। অনেকেই মনে করেন, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। যদি অন্য কিছু বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করব, আবার কিছু বিষয় বাজারের ওপর ছেড়ে দেব, এটা ভালো ফল দেবে না। মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থাকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া যেতে পারে। সেই সীমার বাইরে চলে গেলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আর বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সব ক্ষেত্রে এবং সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। এর চেয়েও খারাপ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে মুদ্রা পাচার। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে প্রেরণ করা হচ্ছে। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং আমদানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এটা কঠোরভাবে রোধ করা প্রয়োজন। এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অর্থ পাচার অনেকটাই কমে আসত। আমাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের অভাব প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
এম এ খালেক: বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে। এই ঋণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত ছিল। ঋণের বিপরীতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশের পক্ষে এই শর্তগুলো কতটা পরিপালন করা সম্ভব বলে মনে করেন?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: আইএমএফ ঋণদানের সময় বাংলাদেশকে যেসব শর্ত দিয়েছে তা পরিপালন করা কতটা সম্ভব তার চেয়ে আমি বলব, এর অধিকাংশ শর্তই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন আইএমএফ ব্যাংকিং সেক্টরের সংস্কার ও খেলাপি ঋণ কমানোর কথা বলেছে। দুর্নীতি কমানোর কথা বলেছে। রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছে। এগুলো আমাদের অর্থনীতির স্বার্থেই করা প্রয়োজন। সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এগুলো সরকারও বলছে। কিন্তু বললেও এগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি রোধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কাজেই এসব শর্ত এমনিতেও পালন করতে হবে। জাতীয় স্বার্থেই এসব সংস্কার সাধন করা প্রয়োজন। কিন্তু আগে করা হয়নি। এখন যদি আইএমএফের শর্তের কারণে সংস্কারগুলো করা হয় তাহলে সেটা ভালোই হবে। আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তার কোনোটি মানা হচ্ছে। আবার কোনোটি মানা হচ্ছে । আইএমএফের সব শর্তই যে মানতে হবে তা নয়। যেমন কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোর কথা সম্ভবত বলা হয়নি। কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো হলে দেশের কৃষি সেক্টরের উন্নতি বিঘ্নিত হবে। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস এগুলোর ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে তা ভালো হবে বলে মনে হয় না।
এম এ খালেক: সম্প্রতি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ভোক্তা ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা কিছুটা বাড়িয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের আপার ক্যাপ প্রত্যাহার করা হয়নি। এই অবস্থায় নীতি সুদ হার বাড়িয়ে কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণ করে দেয়াটা কোনোভাবেই যৌক্তিক বলে মনে হয় না। কোনো কোনো খাতে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার প্রত্যাহার করা হবে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বহাল রাখা হবে- এটা কাম্য নয়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলকে খুশি করার জন্যই সম্ভবত এটা করা হচ্ছে। যারা ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণ করেন তাদের যে সুদ প্রদান করা হচ্ছে তা মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম। ফলে তারা আমানত সংরক্ষণের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন না। সাধারণভাবে আমানতের ওপর প্রদেয় সর্বোচ্চ সুদের হার প্রত্যাহার করা হলে সাধারণভাবে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও প্রত্যাহার করা উচিত ছিল।
এম এ খালেক: আমাদের দেশের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগের বছর দেশ থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যায়। আগামী নির্বাচনের আগে এ বছর কি অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে?
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: অর্থ পাচার তো চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হচ্ছে। এখন তো হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। মাঝেমধ্যেই পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় অর্থ পাচারের। নির্বাচনের বছরে অনেকেই অর্থ পাচার করে থাকেন। তারা অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের নিরাপত্তা দিতেই এটা করে থাকেন। আসলে নির্বাচনের সঙ্গে অর্থ পাচারের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থ পাচার এমনিতেই হচ্ছে। দিন দিন তা বেড়ে যাচ্ছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা