বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের ব্যাংকখাত ও পুঁজিবাজারকে ধরে রেখেছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘চারদিকে এখন যুদ্ধ ও অস্থির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশে এমন ইকোনমিক টার্বুলেন্ট মোমেন্টেও পুঁজিবাজার ও ব্যাংকিং সেক্টর আমরা ধরে রেখেছি। এটা ভালো অবস্থান এবং বড় ধরনের অর্জন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ তার টিমকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।’
শনিবার বগুড়ার নওদাপাড়ায় মম ইন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন শিবলী রুবাইয়াত। সেখানে সভাপতির বক্তব্য রাখেন তিনি।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকার পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের অনেক জায়গাতে ধর্মঘট চলছে। জার্মানিতে ধর্মঘটের কারণে বিমানবন্দর বন্ধ হয়েছে। এরকম অস্থির অবস্থাতেও আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনের দিনে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ ও সঞ্চয় প্রয়োজন হবে এ দেশে। সম্মলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ দেশকে আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। সব মিলিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। এই বাজারে যখন যা প্রয়োজন, আমরা রেগুলেটর হিসেবে সবকিছু করব। এখানে আমাদের কোনো প্রতিপক্ষ নেই। এখানে আমাদেরকে কেউ বাধা দিচ্ছে না। আমাদের যখন যেটা লাগছে, প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে শুরু করে সবাই আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং এখন আমাদের ইতিবাচক অংশগ্রহণ দরকার। পার্টিসিপেশনের মাধ্যমে ট্রানজেকশন বাড়লে সেকেন্ডারি মার্কেট ভাইব্রেন্ট হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মকভাবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি। সেজন্যই ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়েছে। ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিলে অনেকের জন্য হয়ত ভালো হবে। অন্যান্য দেশের মার্কেটগুলোর যে অবস্থা, সে তুলনায় আমরা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য প্রাথমিক কাজটি করছি। লাভ বা রিটার্ন পাওয়ার চেষ্টা সবারই থাকে। তবে, নিজেদের সুরক্ষা দেয়াটা সবচেয়ে বড় কাজ।’
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট ও লংটার্ম ফাইন্যান্সের একমাত্র উৎস হচ্ছে পুঁজিবাজার। যেটা বছরের পর বছর ধরে হচ্ছে না। আমরা এটা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা লংটার্ম ফাইন্যান্সের প্রয়োজন হলে পুঁজিবাজারমুখী হবেন। গতকাল গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও বারবার বলেছেন, ‘লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট দায়িত্বগুলো বড় আকারে পুঁজিবাজারে স্থানান্তর করেন।’ তাই, আমাদের লংটার্ম ইনভেস্টমেন্ট, লংটার্ম ফাইন্যান্স, লংটার্ম লোন ও লংটার্ম রিটার্ন এসব কিছুর জন্য শুধুমাত্র পুঁজিবাজারমুখী হতে হবে।’’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলোদেশের সম্ভাবনা প্রচুর আছে। কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার সফর করেছি। সেখানে থাকা অবস্থায় এবং সেখান থেকে ফেরত আসার পর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পৃথিবীর সকল দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে আসছে। আমরা বুঝতে পারছি যে, এখন সবকিছুই বাংলাদেশের দিকে ধাবমান।’
বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্সের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান মিলন উপস্থিত ছিলেন। বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা