আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:৩২
এই সিদ্ধান্তের মাথামুণ্ডু নেই: আহসান মনসুর

এই সিদ্ধান্তের মাথামুণ্ডু  নেই: আহসান মনসুর

ফাইল ছবি

আবদুর রহিম হারমাছি

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের আলোকে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেইন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের যে একক বিনিময় হার বেঁধে দিয়েছে, তার কোনো মাথামুণ্ডু নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

এ সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘এটা কোনো ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই সিদ্ধান্তে বাজার স্থিতিশীল না হয়ে উল্টো আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এই সিদ্ধান্তের কোনো মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।’

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘টাকার বিপরীতে ডলারের অস্বাভাবিক উল্লম্ফন আমাদের অর্থনীতিকে প্রতি মুহূর্তে তছনছ করে দিচ্ছে। সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে আমাদের। আমদানি কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। ডলার ছুটছে তো ছুটছেই। কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ফের বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল রোববার প্রতি ডলার ১১৪ টাকার বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।

এই মুহূর্তে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত না নিয়ে অদ্ভুত-উদ্ভট একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফেদা-এবিবি। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই ভালো ফল দেবে না। বাজারের চাহিদা-জোগান বিবেচনায় নিয়ে একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না।’

সেই বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত কী- এ প্রশ্নের উত্তরে দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, “এই মুহূর্তে রেমিট্যান্স, রপ্তানি, আমদানির ক্ষেত্রে আলাদা দাম বেঁধে দেয়ার কোনো মানে হয় না। আমি মনে করি, এই তিন ক্ষেত্রে ডলারের ‘একক’ দর নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। ব্যবধান খুব বেশি হলে ২ শতাংশ থাকতে পারে।”

বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘আমার বিবেচনায় ডলারের একক দর এখন ১০৫ টাকা বেঁধে (ফিক্সড) দেয়া উচিত। রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে দরের ব্যবধান বা পার্থক্য এক থেকে দেড় টাকা (খুব বেশি হলে ২ শতাংশ) হওয়া উচিত। তা হলেই বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। অবাস্তব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বাজারের ভালো কিছু আশা করা ঠিক হবে না।’

বাফেদা ও এবিবির এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই, সরকার রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে যে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, তা এখন তুলে দেয়া উচিত। এটা আসলে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে না। উল্টো সরকারের কোষাগার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চলে যাচ্ছে।’

মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত মেনে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ডলার কেনাবেচার অভিন্ন দর ঘোষণা করেছে বাফেদা ও এবিবি। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সোমবার থেকে দেশে আসা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। আর রপ্তানি আয় নগদায়ন করতে হবে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা দামে। আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে প্রতি ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা।

গতকাল এবিবি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম ডলারের এই বিনিময় হার ঘোষণা করেন।