আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৩ ২১:০৮
কাল ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে কী হবে
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কাল ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে কী হবে

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এমনটা লেখেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পর্ন তারকা স্টর্মি ডেনিয়েলসকে অর্থ প্রদান সংক্রান্ত এক তদন্তকে গ্রেপ্তারের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ট্রাম্প যদি সত্যিই গ্রেপ্তার হন, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তার বিরুদ্ধেই প্রথম অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হবে।

ট্রাম্পের দাবির সত্যতা জানা যাবে কাল। আপাতত এই মামলা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করা যাক।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?
২০১৬ সালে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পর্ন তারকা স্টর্মি ডেনিয়েলস। তার দাবি, ২০০৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল ডেনিয়েলসের। সেটার প্রমাণ বিক্রির প্রস্তাব দেন তিনি।

ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন। ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের কর্মীরা ঘটনাটি জানার পর তার আইনজীবী মাইকেল কোহেন মুখ বন্ধ রাখার জন্য ডেনিয়েলসকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন। এটা আইনবিরুদ্ধ নয়। তবে কোহেনকে সে অর্থ পরিশোধের সময় ট্রাম্প সেটাকে আইনজীবীর ফি হিসেবে উল্লেখ করেন। আর ব্যবসায়িক তথ্যের ভুল উপস্থাপন নিউ ইয়র্কে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য।

একদিক থেকে এতে নির্বাচনী নিয়ম ভঙ্গও হয়েছে বলা যায়। কারণ ডেনিয়েলসের সঙ্গে লেনদেন গোপন করার অর্থ হলো ট্রাম্প সে সম্পর্কের কথা ভোটারদের জানতে দিতে চান না। আর অপরাধ গোপন রাখতে ভুল তথ্যের উপস্থাপন আরও গুরুতর অভিযোগ।

মামলাটি বেশ জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের নজির খুব বেশি নেই। তা ছাড়া রাজনীতিবিদদের নির্বাচনী প্রচারণার অর্থায়ন এবং ব্যক্তিগত খরচের মধ্যে সীমারেখা টানা নিয়ে করা মামলার বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে।

সত্যিই কি অভিযোগ গঠন করা হবে?
অভিযোগ গঠন করা হবে কি না তা নির্ভর করছে নিউ ইয়র্ক সিটি ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন ব্র্যাগের ওপর। অভিযোগ গঠনের মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য তিনিই গ্র্যান্ড জুরি গঠন করেন। কখন অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে, আদৌ হবে কি না, তা কেবল তিনিই বলতে পারেন।

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা বলেছেন, গ্র্যান্ড জুরির সামনে নিজের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ দেয়া হয় ট্রাম্পকে। এ থেকে ধারণা করা যায়, তদন্ত শেষ পর্যায়ে।

ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাসভবন মার-এ-লাগোর একাংশ। ছবি: এএফপি

ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলে কী হবে?

অভিযুক্ত হলে ট্রাম্পকে সাধারণ নিয়ম মেনেই গ্রেপ্তার করা হবে। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোর বাসভবন থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির আদালতে নেয়া হবে তাকে। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় আগে ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয় ও ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা হওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ ট্রাম্প নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার অনুসারী আছে। ঘটনা কোনদিকে মোড় নেবে, তার ঠিক নেই। আবার ট্রাম্পের নিরাপত্তাও এখানে বিবেচ্য।

অভিযোগ গঠনের পর বিচারক নির্ধারণ করা হবে। এরপর শুনানির সময় ধার্য, ভ্রমণে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং জামিন আবেদনের মতো বিষয়গুলোও আসবে, যা সাধারণ নিয়ম মেনেই হবে।
ব্যবসায়িক তথ্যের ভুল উপস্থাপনের অভিযোগে সচরাচর জরিমানা করা হয়। আর অপরাধ গোপন রাখতে ভুল তথ্যের উপস্থাপনের ক্ষেত্রে চার বছরের জেল হতে পারে। তবে জেলের আশঙ্কা দেখছেন না আইন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্পের জন্য কি প্রতিবাদ হবে?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশের পর ট্রাম্প তার সমর্থকদের প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান জানান। ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা আর এমনটা হতে দিতে পারি না। আমরা চুপচাপ বসে দেখতে থাকলে তারা এই জাতি ধ্বংস করে দেবে।’

২০২১ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের দাঙ্গার আগেও অনেকটা একই সুরে আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। এবারও সহিংসতার ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।

নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ে ২০ মার্চ নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। ছবি: এএফপি

রোববারে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফাঁস হওয়া চিঠি থেকে জানা যায়, আলভিন ব্র্যাগ এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক পুলিশ এবং আদালতের নিরাপত্তাদলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে বড় কোনো সহিংস আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

অভিযুক্ত হলে ট্রাম্প কি নির্বাচনে লড়তে পারবেন?

অভিযোগ গঠন কিংবা দোষী সাব্যস্ত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। আর যত যা-ই হোক, নির্বাচন লড়ার সব ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে গ্রেপ্তার হলে নির্বাচনী প্রচারণায় তার প্রভাব তো পড়বেই।

সূত্র: বিবিসি