চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাত্র ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরের আট মাসে শতাংশ হিসাবে মোট এডিপির এতো কম অর্থ খরচ হয়নি।
প্রতি বছরই অর্থবছরের প্রথম ভাগে এডিপি বাস্তবায়নের হার কম থাকে; দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার আট মাস পার হয়ে গেলেও সরকারের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের গতি নেই। অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে অর্থাৎ সাত মাসে এডিপির ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামাল দিতে ডলার সাশ্রয় ও খরচ কমানোর সরকারি পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে চলমান এডিপি বাস্তবায়নে। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, গত কয়েক বছরের মতো বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়ন ঠিক ৯০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে।
বুধবার প্রকাশিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য সরকার ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল।
গত ১ মার্চ অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় মূল এডিপি থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ বরাদ্দ কমিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির অন্যতম প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিরি গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ৮৬ টাকার ডলার কিনতে এখন ১০৭ টাকা লাগছে। এতে সব ধরনের আমদানি পণ্যের দাম বেশি পড়ছে। জাহাজ ভাড়া বেড়েছে। এতে সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে গেছে। রডের টন লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সিমেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সরকারও ডলার সাশ্রয় ও খরচ কমানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সব কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাই সব মিলিয়েই এবার এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। আমার মনে হয়, আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার অর্থবছর শেষেও এডিপি বাস্তবায়ন কম হবে।’
আইএমইডির তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের মোট এডিপি বরাদ্দের প্রায় ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ আছে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। এরমধ্যে চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে ২০ শতাংশের কম বাস্তবায়ন করেছে।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে এই আট মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ ৪৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং সেতু বিভাগ ৪৭ দশমিক ১৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পকে এ, বি এবং সি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলিকে সি ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে এবং সেগুলোর জন্য অর্থায়ন সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।
আইএমইডির তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট এডিপির ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই আট মাসে বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা