একটি ক্ষয়ে যাওয়া পোস্ট কার্ড। ওপরে বড় করে লেখা ‘বীরাঙ্গনা পুনর্বাসনের আবেদন’। পোস্ট কার্ডে একটি চিঠি যুক্ত করা। চিঠিটি একজন মায়ের। তার মেয়েকে নিয়ে লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধু, ‘আপনার প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা। আমার সংসারে আমার বলিতে একমাত্র মেয়ে ***। সে কলেজের ছাত্রী ছিল।… বিগত ৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দেশীয় রাজাকারদের সঙ্গে লইয়া পাকিস্তানি বাহিনী আমাদের এলাকা ঘেরাও দেয়।… সেই সময় আমার একমাত্র মেয়েকে তাহারা ধরিয়া লইয়া ***। আমরা ফেরত পাই নাই। ১৬ তারিখে স্বাধীনতার পর ১৭ তারিখে সে বাসায় ফিরিয়া আসে। কিন্তু মান-ইজ্জত সমস্তই বিসর্জন দিয়া। এখন সে বীরাঙ্গনা। আমি এই বীরাঙ্গনা মেয়েকে নিয়া খুব অসুবিধায় আছি। শুনিতে পাইলাম এই দেশের ২০,০০০ নির্যাতিত ও অগণিত বীরাঙ্গনা মহিলার পুনর্বাসনের জন্য আপনি আলাদা দপ্তর খুলিয়াছেন। আমার এই বীরাঙ্গনা মেয়েরও একটা বিহিত করিবেন এই আশা নিয়া লেখনী শেষ করিলাম।’
নোয়াখালী থেকে লেখা হয়েছিল এই চিঠিটি। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে নাটকের দল স্পর্ধার ফেসবুক পেজ থেকে এই চিঠিটি দিয়ে একটি পোস্ট দেয়া হয়। তখন তারা জানিয়েছিল- স্বাধীনতার সময়ে নির্যাতিত এই বীরাঙ্গনাদের নিয়ে নীলিমা ইব্রাহিম লিখেছিলেন ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নামে একটি বই- সেটিই মঞ্চে নিয়ে আসছেন তারা।
গতকাল স্বাধীনতা দিবসে ওই ফেসবুক পেজ থেকে আবারও পোস্ট দেয়া হয়। সঙ্গে সব্যসাচী হাজরার টাইপোগ্রাফিতে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইয়ের নাম। তাতে লেখা হয়, ‘স্পর্ধা আসছে’, নীলিমা ইব্রাহিমকৃত ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নিয়ে। স্পর্ধা আসছে, এই বাংলার হাজারও তরুণ-তরুণীর পক্ষ হতে প্রত্যেক বীরাঙ্গনাকে বলতে, ‘বীরাঙ্গনা তোমাকে প্রণতি করি, হাজার সালাম তোমাকে। তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা, ওই মাটিতে তোমার অগ্রাধিকার। স্পর্ধা, আসছে …।’
দুটো পোস্ট থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, স্পর্ধা নাটকের দলটি এবার মঞ্চে আনছে নীলিমা ইব্রাহিমের এই অমর আখ্যান। স্পর্ধা থেকে জানানো হয়, সৈয়দ জামিল আহমেদের নির্দেশনায় এবার মঞ্চে আসবে নাটকটি। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে নাটকটি মঞ্চে আসবে।
কারা অভিনয় করছেন? আরও কী থাকছে সে বিষয়ে বিষদ জানানো এখন মানা। আপাতত জানা গেছে, কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে জানানো হবে পরবর্তী তথ্য।
বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটারের বাইরে গিয়ে পেশাদার থিয়েটারের একটি নিরীক্ষা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘স্পর্ধা: ইন্ডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেক্টিভ’। বাংলাদেশের প্রথিতযশা মঞ্চ নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে অভিনয়শিল্পী মহসিনা আক্তার ও সোহেল রানা কাজ করছেন এই দলে। নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি অভিনয় ও মঞ্চ সংশ্লিষ্ট নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দলটি।
সৈয়দ জামিল আহমেদ ঢাকার মঞ্চে ‘বিষাদ সিন্ধু’ ও ‘বেহুলার ভাসান’-এর মতো প্রযোজনা নির্দেশনা দিয়ে দারুণ খ্যাতি পেয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ বিরতি শেষে ২০১৭ সালে নাটবাঙলার আয়োজনে ‘রিজওয়ান’ নামে একটি নাটক মঞ্চে আনার মধ্য দিয়ে দারুণ শোরগোল ফেলে দেন। ফের ঢাকার মঞ্চে নিয়মিত কাজের শুরু হলো তার। এর পরেই গঠিত হয় স্পর্ধা: ইন্ডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেক্টিভ। ধীরে ধীরে তারা ‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা’, ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’ ও ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ মঞ্চে আনে। এবার আনছে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা