পাঁচ দফা দাবিতে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন পরিবহন-শ্রমিকরা। এতে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে সিলেট জেলা। বন্ধ রাখা হয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। এদিকে সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন মোড়ে ও নগরের প্রবেশপথে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন পরিবহন-শ্রমিকরা।
ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়ি এমনকি বিআরটিসি বাস চলাচলেও বাধা দিচ্ছেন তারা। বাধার কারণে কোনো গাড়িই চলাচল করতে পারছে না। বন্ধ রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের পাশাপাশি নগরে চলাচলকারী যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পরিবহন-শ্রমিকদের ছয়টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ’ সিলেট জেলায় এই কর্মবিরতির ডাক দেয়। দাবি পূরণ না হলে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে পুরো বিভাগে কর্মবিরতি শুরু করার হুমকি দিয়েছেন তারা।
কয়েক দিন ধরেই পাঁচ দফা দাবিতে নগরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে পরিবহন-শ্রমিক সংগঠনগুলো। দাবি পূরণ না হওয়ায় মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা। গত রোববার তারা এ ধর্মঘটের ডাক দেন।
মঙ্গলবার সকালে বিআরটিসি বাসে করে হবিগঞ্জ থেকে সিলেট আসেন লায়েক আহমদ। নগরে প্রবেশের পূর্বেই দক্ষিণ সুরমার আব্দুস সামাদ আজাদ চত্বরে তাদের বাস আটকে দেন সেখানে অবস্থান নেয়া পরিবহন-শ্রমিকরা। লায়েক বলেন, ‘শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন এতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চলাচল করলে তারা বাধা দেবেন কেন? বাস থেকে নামার পর এক ঘণ্টা এখানে দাঁড়িয়ে আছি, নগরে যাওয়ার কোনো বাহন পাচ্ছি না।’
ব্যাংক কর্মকর্তা সাইমুম হোসেন নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে রাস্তায় নেমে শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন। নগরের উপশহর এলাকায় তার গাড়ি আটকে দেন পরিবহন-শ্রমিকরা। সাইমুম বলেন, ‘তারা কর্মবিরতি ডেকেছেন কিন্তু আমি তো আর পরিবহন শ্রমিক নই। আমি নিজের অফিস ও বাচ্চার স্কুলে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তারা কেন আমার গাড়ি আটকাবে? এটা তো মাস্তানি।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ বলেন, ‘সিলেটের বাইরের অনেক চালক কর্মবিরতির কথা জানেন না। না জেনেই তারা গাড়ি নিয়ে সিলেট চলে আসছেন। তাদের বোঝাতেই শ্রমিকরা কয়েকটি মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। কাউকে জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে না এবং ব্যক্তিগত গাড়িও আটকানো হচ্ছে না।’
পাঁচ দফা হলো ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি, রেকারিং বাণিজ্য ও মাত্রাতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ, মহানগর পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার ও অতিরিক্ত উপকমিশনারকে প্রত্যাহার, গাড়ি ফিটনেস মামলা সঠিকভাবে করা, সিলেট শ্রম আদালতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে হয়রানি বন্ধ এবং আদালত থেকে শ্রমিক প্রতিনিধি নাজমুল আলমকে প্রত্যাহার, আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ পাথরকোয়ারি খুলে দিতে হবে, সব ভাঙা সড়ক সংস্কার এবং অটোরিকশা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর রাজন সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা ন্যায্য পাঁচটি দাবি জানিয়ে আসছি। একটি দাবিও আজ পর্যন্ত মানা হয়নি।’
জেলা প্রশাসক মুজিবর রহমান বলেন, পরিবহন-শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজ বুধবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার তাদের সঙ্গে বসবেন। তবে মানুষকে জিম্মি করে এভাবে হুট করে কর্মবিরতি ডাকা অন্যায়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা