‘আমার ছেলের লাশটা আইন্না দাও, আমি দেখমু। আমার পোলাডা ১২ দিনের ছুটি পাইয়া চির ছুটিতে চইলা গেলো।’ এভাবেই আহাজারি করছিলেন সৌদি আরবে ওমরা করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মামুন মিয়ার (২২) বাবা আবদুল আওয়াল।
নিহত মামুন কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার মোস্তাপুর গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার সকাল থেকে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ভিড় করতে থাকেন মামুনের বাড়িতে।
বুধবার সকালে মোস্তাপুর গিয়ে দেখা যায়, মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল নির্বাক হয়ে বসে আছেন। মা মমতাজ বেগম ছেলের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। মোবাইলে ছবি দেখে বুক চাপড়ে কাঁদছেন। আবদুল আওয়ালের ৩ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে মামুন মিয়া চার নম্বর সন্তান। ৬ মাস আগে মামুন তার মামা ইয়ার হোসেনের মাধ্যমে সৌদিতে যান। সেখানে হোটেল বয়ের চাকরি নেন।
নিহত মামুনের মামী তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ঘটনার আগে মামুন, তার মামা ইয়ার হোসেন ও মামুনের ভাগিনা জাহিদুল ইসলাম গাড়িতে করে ওমরা করার জন্য মক্কার উদ্দেশে রওনা করে। পথিমধ্যে তারা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাদের বহন করা গাড়িটি ব্রেকফেল করে একটি ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। মামুন গাড়ি থেকে বের হতে পারে নাই। আগুনে পুড়ে মারা যায় সে। দুর্ঘটনায় ইয়ার হোসেন ও জাহিদ গুরুতর আহত হন। তারা এখন মক্কার একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
নিহত মামুনের বাবা আবদুল আওয়াল বলেন, ‘অন্তত ৯ মাস আগে মামুন ভিসার জন্য আবেদন করে। বয়স কম হওয়ায় সে আবেদন বাদ দেয়া হয়। পরে ৬ মাস আগে পুনরায় আবেদন করে মামুন। ৫ লাখ টাকা খরচ করে তাকে সৌদিতে আরবে পাঠাই। পুরোটা টাকা ঋণ করেছি আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভুইয়া জনি বলেন, ‘আমি নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনিকভাবে পরিবারটির জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করবো।’
কুমিল্লা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান দফতরের কর্মকর্তা দেব্রবত ঘোষ বলেন, ‘আমরা ঘটনা শুনেছি। মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য যা যা করতে হয়, তা সবই করবো।’
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে সৌদি আরবের মক্কায় ওমরা করতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি বাস। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই দুর্ঘটনায় ১২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৪ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা