আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০
কক্সবাজারে মাদকের চালান, মুক্তিপণ আদায়ে বেড়েছে অপহরণ
প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার)

কক্সবাজারে মাদকের চালান, মুক্তিপণ আদায়ে বেড়েছে অপহরণ

প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেড়েছে অপহরণ ও মানব পাচার। গত ছয় মাসে এসব এলাকায় অন্তত ৪৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় পুলিশ এখনো অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেনি। স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেছেন, এমন ঘটনা তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।

টেকনাফ থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে উপজেলার পাহাড়ে ৪৯ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা নাগরিক ও ৩৩ জন স্থানীয় বাসিন্দা। গত এক মাসে শুধু বাহারছড়া এলাকায় সাত-আটটি ঘটনায় প্রায় ১০ জন অপহরণের শিকার হন। সর্বশেষ গত রোববার মুক্তিপণের দাবিতে হ্নীলা ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকার কৃষক মোহাম্মদ ছৈয়দকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা জানান, টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি তৎপরতা বাড়ায় ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা’ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকেই তারা অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে এলাকার কিছু লোকজন। এখানকার মানুষদের অপহরণের মাধ্যমে মাদক চোরাচালানসহ মুক্তিপণের বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অপরাধীরা।

থানা-পুলিশের এক সদস্য জানিয়েছেন, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে মুক্তিপণের দাবিতে রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ করছে। তবে এসব ঘটনায় তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসে না। অপহরণের পর মুক্তিপণ দিয়ে স্বজনদের মুক্ত করে আনেন ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে গত ৩ মার্চ দুই শিশুকে অপহরণের ৮ ঘণ্টা পর ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণে ছেড়ে দেয় অপরাধীরা। এর আগে, গত ৮ জানুয়ারি টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় খেত পাহারার সময় চার কৃষক অপহরণের শিকার হন। পরে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকায় খালে মাছ ধরার সময় অপহৃত হন আটজন। তারা ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসেন।

এদিকে অপহৃতদের উদ্ধার করে আনা স্বজনরা জানান, স্থানীয় এক চৌকিদারসহ কয়েকজন অপহরণকারী চক্রের সদস্য হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ ইছাক ও তার সহযোগী মো. সেলিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা আরও জানান, অপহরণকারীদের হাতে রয়েছে ভারী অস্ত্র। অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করতে তারা অমানবিক নির্যাতন চালায়। তাই তারা বাধ্য হয়েই পুলিশের সহযোগিতা নেন না। কারণ এতে অপহৃত ব্যক্তির জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির ও মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অভিযান জোরদার হলে পাহাড়ে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। নিরাপদ এলাকা হিসেবে তারা বাহারছড়ার পাহাড়ি এলাকাকে ব্যবহার করছে। এ কারণে হঠাৎ করে মাদক পাচারসহ অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত তারা পাহাড়ে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। এখানে সাধারণ মানুষদের কেউই নিরাপদ না। অনেকেই রাতে ঘর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, টেকনাফ থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরে বাহারছাড়ার পাহাড়ি এলাকায় নোয়াখালীপাড়ার অবস্থান। এর পাশেই মারিশবুনিয়া, ডেইল পাড়া, বাঘগুনা ও কোনাপাড়া। এসব গ্রামে সাড়ে ২০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই বসতি পাহাড়ি অঞ্চলে। সম্প্রতি অপহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষ ভয়-ভীতির মধ্যে আছেন। এসব ঘটনায় স্থানীয় লোকজনও জড়িত। এ বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, ছয় মাসে টেকনাফের বাহারছড়া এলাকায় অর্ধশতাধিকের মতো অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ চেষ্টা করছে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করতে। তবে তাদের আস্তানা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অপহরণ ঘটনার অধিকাংশই মাদকের লেনদেনের কারণে হয়েছে জানিয়ে ওসি আব্দুল হালিম বলেন, বাহারছড়ায় অপহৃত হলে উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালায়। মাদক লেনদেনের কারণে ওই এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় স্থানীয়রা নিজেই এসব সমস্যার সমাধান করেন। তাই এসব ঘটনা পুলিশের কাছে আসে না।

আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এলাকায় ৪ মাসে ১৫টি অপহরণের ঘটনায় ৩ জন বাংলাদেশিসহ ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হলে কয়েকজন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।’