আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:৪৫
আজারবাইজান-আর্মেনিয়ায় ফের সংঘর্ষ

আজারবাইজান-আর্মেনিয়ায় ফের সংঘর্ষ

সোটক গ্রামের কাছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে একটি সীমান্ত চৌকিতে পরিখা তৈরি করে পাহারায় আর্মেনীয় সেনাবাহিনী।

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া সীমান্তবর্তী দুই দেশের সেনাদের মধ্যে আবারো সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রুশ বার্তা সংস্থা তাস-এর বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স। ২০২০ সালে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে বিরোধপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিল আজারবাইজান। কিন্তু সোমবার রাতভর এই রক্তাক্ত সংঘর্ষে সেনা নিহতের কথা জানিয়েছে আজারবাইজান। অন্যদিকে সংঘর্ষের কথা স্বীকার করলেও নিজেদের সেনা হতাহতের বিষয়ে কিছু জানায়নি আর্মেনিয়া কর্তৃপক্ষ। সংঘাতের জন্য উভয় দেশই একে অপরকে দোষারোপ করছে।

আজারবাইজান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো মর্টারসহ বিভিন্ন ক্যালিবারের অস্ত্র দিয়ে আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর বেশ কয়টি অবস্থান, আশ্রয়স্থল ও রিইনফোর্সমেন্ট পয়েন্টে তীব্র গোলাবর্ষণ করেছে। এতে প্রাণহানি ও সামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের সীমান্তে আর্মেনিয়ার বাহিনী গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছে, এই এলাকায় অস্ত্র নিয়ে এসেছে এবং গত সোমবার রাতে খনন অভিযান চালিয়েছে। তাদের অভিযোগ, সামরিক লক্ষ্যস্থলে হামলার জন্যই তারা এসব করেছে।

উল্টোদিকে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আজারবাইজানের বড় মাপের উসকানির ফলেই গোলাগুলি শুরু হয়। আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনীগুলোও সমানুপাতিক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি আহ্বান করেছে এবং রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা ব্লক কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের প্রতি আবেদন জানাবে। পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছেও আবেদন জানাবে।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশাপাশি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ব্লিনকেন অবিলম্বে সহিংসতা থামানোর জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর্মেনিয়ার ৪৯ জন সেনা সদস্য নিহতের কথা জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা দুই পক্ষকেই উত্তেজনা থেকে বিরত থাকার জন্য ও সংযম পালনের আহ্বান করছি। গত ২০২০ ও ২০২১ সালে রাশিয়া, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার নেতৃবৃন্দের মাঝে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সংঘটিত হয়েছিল, সে অনুসারে কঠোরভাবে যুদ্ধবিরতি পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাকু ও ইয়েরাভেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে মস্কো। পরিস্থিতি সমাধানে সহায়তা করার জন্য আর্মেনিয়ান নেতৃত্বের কাছ থেকে একটি আবেদন গৃহীত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে মঙ্গলবারের মধ্যেই রাশিয়ার মধ্যস্থতার যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হবে।

১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকার সময় নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে প্রথম দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ওই সময় আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভূখণ্ড বলে স্বীকৃত অঞ্চলটি দখল করে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক আর্মেনীয় মানুষের বসবাস। ২০২০ সালে লড়াই করে অঞ্চলটি আর্মেনিয়ার কাছ থেকে পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় আজারবাইজান। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সে সময় সংঘাতের অবসান হয়েছিল। এর পর থেকে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার চুক্তির জন্য দুই দেশের নেতারা একাধিকবার মিলিত হয়েছেন।