বান্দরবানের লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের ইয়াংছা বাজারের বেইলি সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটিকে ঠেকাতে নিচের খুঁটির সঙ্গে অতিরিক্ত লোহার পাইপ বেঁধে দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুর ওপর ভারী যানবাহন চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করার বার্তা নিয়ে দুই পাশেই টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। তবে সে সর্তকর্তা মানছেন না কেউ। তাতে এই সেতুতে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে।
বান্দরবানের দুর্গম উপজেলা লামা ও আলীকদমের জনসাধারণের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক। এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দারাও উপজেলা সদরে যাতায়াতে সড়কটি ব্যবহার করেন। এই সড়কেরই ইয়াংছা বাজারসংলগ্ন বেইলি সেতুর ওপরের পাটাতনের বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে গেছে। দুর্বল অবকাঠামোর কারণে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ইয়াংছা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীন জরাজীর্ণ বেইলি সেতুর নিচে খুঁটির সঙ্গে আলাদাভাবে লোহার পাইপ বসিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। সেতুর দুই পাশে রয়েছে সওজের সাইনবোর্ড, তাতে লেখা- ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, সর্বোচ্চ ৫ টন মালামাল গাড়িতে পরিবহন করা যাবে’। কিন্তু সাইনবোর্ডের এই নির্দেশনা মানছেন না কেউ-ই। প্রতিনিয়ত সেতুটির ওপর দিয়ে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল করছে। একই অবস্থা লামা-আলীকদম সড়কের কানামাঝির ঘাট এলাকার বেইলি সেতুটিরও।
স্থানীয়রা বলছেন, বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় পাশে লাল পতাকা টাঙিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সামান্য সংস্কারকাজ করে যান চলাচলের জন্য সচল রেখেছে সড়ক বিভাগ। সেতুটি এতটাই জরাজীর্ণ যে, একে টিকিয়ে রাখতে আলাদা লোহার পাইপের সাহায্যে ঠেস দেয়া হয়েছে। তাতেও কমছে না দুর্ঘটনার ঝুঁকি। কারণ, ৫ টনের সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিনিয়ত পাথর, ইট, তামাক ও কাঠবোঝাই ২৫-৩০ টন ওজনের ভারী গাড়ি চলাচল করছে। বিশেষ করে চলতি মৌসুমে তামাক ও পাথরবোঝাই ভারী যান চলাচলের কারণে সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। একই অবস্থা কানামাঝির ঘাটের বেইলি সেতুরও।
ইয়াংছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বলেন, বেইলি সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। জনসাধারণের স্বার্থে সেতুটি জরুরিভিত্তিতে পুনর্নির্মাণ করা জরুরি।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০-৮০ সালের দিকে বান্দরবান জেলায় সড়ক চালু হওয়ার পর ইস্পাত দিয়ে ৭৬টি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ব্যবহারে সেতুগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি দুটি সেতু ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয় এবং আরও কয়েকটিকে পাকা গার্ডার করার কাজ প্রক্রিয়াধীন।
সওজের লামা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী পুর্ণেন্দ্র বিকাশ চাকমা বলেন, লামায় যেসব বেইলি সেতু রয়েছে, এর মধ্যে ইয়াংছা সেতুটি ৫০ মিটার দীর্ঘ। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি সচল রাখতে আলাদাভাবে পাইপ দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুতই সেতুটি ভেঙে নতুন করে পাকা গার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
বান্দরবান সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রথম দফায় ইয়াংছা সেতুসহ ১২টি সেতু পাকা গার্ডার করার প্রাক্কলন করে সড়ক মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে লামার কুমারী এলাকার ৪১ মিটার একটি পাকা গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ শেষে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে আলীকদম কানামাঝির ঘাট সেতুটি নির্মাণ করা হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা