সকালবেলায় রান্নাঘর নিরুত্তাপ। হোটেল-রেস্তোরাঁর ঝাঁপ নামানো। পথের মোড়ের চা-দোকানগুলো পর্দা দিয়ে আড়াল টানা। জীবনযাত্রার অভ্যস্ত রুটিন যেন পাল্টে গেছে। কিন্তু দুপুরের পরই দৃশ্য অন্য রকম। পাড়ার মোড়, এলাকার ফুটপাতে টেবিল পেতে লাল সালু মোড়ানো ইফতারের পসরার সামনে চরম ভিড়।
রেশমি জিলাপি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, কাবাব, হালিমের পাশাপাশি হালুয়ার চাহিদাও ব্যাপক।
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো রংপুরের আছে খাবার-দাবারের আলাদা ঐতিহ্য। ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতা করে তৈরি করেন বাহারি স্বাদের নানা ধরনের মুখরোচক ইফতার সামগ্রী। রংপুরে এবারে যেসব ইফতার সামগ্রী ক্রেতাদের টেনেছে তার মধ্যে জনপ্রিয় মহুয়ার রেশমি জিলাপি, শাহী হালুয়া। কমলার রস দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি রেশমি জিলাপি এবং গাজর, সুজি, ছানা চিনির সংমিশ্রণে তৈরি শাহী হালুয়া কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে। একটু দেরি হলেই খালি হাতে ফিরতে হয়। একসঙ্গে বেশি কিনতে হলে অর্ডারও দিতে হয়। এ ছাড়া ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে নানা পদের মাছের চপ, গার্লিক চপ, চিকেন আচারি, মাটন লেগ রোস্ট, চিকেন চিলি, সাসলিক, চিকেন টিক্কা, মাটন চপ ও মহুয়া মাঠা লাবাং।
গতকাল সোমবার কাচাচিবাজার এলাকায় মহুয়া ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারির ইফতারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, রেশমি জিলাপি ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জিলাপি তৈরির কারিগর দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। জিলাপি ভাজা শেষ হতে না হতেই তা চলে যাচ্ছে ক্রেতার হাতে।
ইফতারপণ্য কিনতে আসা গুপ্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাকছুমা আইভি বলেন, এবার ইফতারে পরিবারের প্রথম পছন্দ রেশমি জিলাপি। এটা খেতে দারুণ সুস্বাদু। কমলার রস দিয়ে তৈরি হওয়ায় এটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। প্রতিদিন পরিবারের জন্য ৫০০ গ্রাম নিতে হয়।
মহুয়া ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারির মালিক আলহাজ নুরুল হক মুন্না বলেন, ‘রেশমি জিলাপি ও শাহী হালুয়া শুধু রংপুরের মানুষ কিনছেন না, অন্যান্য জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন এসে ইফতার পার্টির জন্য আলাদাভাবে অর্ডার দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদা এতোই যে, সরবরাহ করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। গত বছরের চেয়ে এবারে বিক্রি অনেক ভালো।’
এবারে রংপুরের মেডিকেল মোড়, কাচারিবাজার, পায়রা চত্বর, লালবাগ, শাপলা চত্বর, স্টেশন এলাকা, মাহিগঞ্জ, সাতমাথা বিভিন্ন এলাকায় নানা পদের ইফতার পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পায়রা চত্বর এলাকায় মেহমানবাড়ি হোটেলে ইফতার পণ্য কিনতে আসা ব্যবসায়ী জোবায়ের হোসেন বলেন, একসময় রমজানে মুড়ি, বুট, বুন্দিয়া দিয়ে ইফতারি করা হতো সাদামাটা। ইফতারিতে অন্য কোনো পদের কথা চিন্তা করতে পারতেন না বেশিরভাগ মানুষ। সময়ের পরিক্রমায় মানুষের রুচি ও স্বাদের পরিবর্তন ঘটেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন বলেন, ‘রমজানকে ঘিরে যাতে কোনো ভেজাল ইফতার পণ্য বিক্রি না হয় এবং ক্রেতারা যেন না ঠকেন, এ জন্য আমরা ইফতারের বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়মিত মনিটরিং করছি।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা