আপডেট : ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:৩৪
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশল ‘যুগপৎ’
আমানউল্লাহ আমান

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশল ‘যুগপৎ’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। এরই মধ্যে বিরোধীদের আন্দোলনে রাজনীতির মাঠ কিছুটা সরব হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মাঠে রয়েছে। দলটি রাজপথের পাশাপাশি নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণে এখন ব্যস্ত। এ ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে যুগপৎ মডেলের কথা ভাবছে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা মনে করছেন, বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যতই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের হাঁকডাক দিক, নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। কাজেই নির্বাচন মাথায় রেখেই ধীর পায়ে এগুচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। রাজপথে বিরোধীদের মোকাবিলায় শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি ঘরোয়া রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বিএনপিতে জ্ঞানী-গুণী লোক আছে। আমরা আশা করছি তাদের চিন্তার প্রভাব যদি দলে কাজ করে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যদি তারা নির্বাচনে না আসে তাহলে আমাদের তো কিছু করার নেই। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও অন্য দলগুলো তো অংশ নিচ্ছে। আমাদের সংবিধানে তো এমন কিছু বলা নেই যে ওমুক দল নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না।’

আওয়ামী লীগ সূত্র বলেছে, বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান অব্যাহত থাকবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি বিএনপি নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় সে বিষয়েও প্রস্তুতি চলছে। এর অংশ হিসেবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি চলছে নির্বাচনী দর-কষাকষি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এবারের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের সম্প্রসারণ বা মহাজোটের কলেবর বৃদ্ধি করা নাও হতে পারে। আগামী নির্বাচন হবে একটু ভিন্ন ধরনের। সেখানে বিরোধীরা কোন কৌশলে অংশ নেবে, তা দেখে কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি দল ১৪ দলীয় জোটে যোগ দিতে চায়। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের বাধার মুখে দলগুলোকে জোটে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই সব দলগুলোকে রাজপথে কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাজপথে সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেয়াই হবে ওই দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমঝোতা।

এমন একটি দলের মহাসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘সরকারবিরোধী জোট গঠনের একটি চেষ্টা আমরা করছি। তবে সেটা সরকারকে নির্বাচনে সহযোগিতার জন্যই। আমরা চাচ্ছি জোট গঠন করে কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আমাদের সক্ষমতা তুলে ধরতে। নির্বাচনে আসন নিয়ে একটা দর-কষাকষি করার বড় সুযোগ তৈরি হবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ভেতর দিয়ে টানা চতুর্থবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনা করবে।’

ক্ষমতাসীন দলের কয়েকটি সূত্র বলেছে, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে গাটছড়া বাঁধা অনেক দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে ক্ষমতাসীনদের। অনেক দলই নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কৌশলগত নানা কারণে আন্দোলনের মাঠে থাকলেও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিতে পিছপা হবে না ওই দলগুলো। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গীদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চে নিবন্ধিত দল রয়েছে দুটি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নেই, তারা এবং নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নেয়া ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করেই অগ্রসর হচ্ছে ক্ষমতাসীন শিবির।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। নিবন্ধিত অধিকাংশ দলই ক্ষমতাসীন জোটের শরিক। জোটে নেই এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার চেষ্টা রয়েছে। নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিলে সে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকছে না বলেই মত দলটির নেতাদের।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৮টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ৩৯টি দল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এ ছাড়া জাকের পার্টিসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী এমন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফের সংলাপ বা আলোচনার আয়োজন করতে পারে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠক করতে পারেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কমিশনের অধীনে সব দল নির্বাচনে আসবে।’

তার মতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা বা না করার ওপর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে না।