বগুড়ায় মামলার দায় থেকে রেহাই দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন দুদকের এক কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ করেছেন রুমাইয়া শিরিন নামে এক নারী। তার দাবি, বিগত সময়ে এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান, বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি।
বগুড়া শহরের রোচাস রেস্টুরেন্টের হলরুমে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন রুমাইয়া। তার ভাই আলমগীর হোসেন পুলিশের এসআই হিসেবে কর্মরত। আলমগীরকে মামলা থেকে বাঁচাতে দুদকের উপসহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী ঘুষ হিসেবে ওই টাকা নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রুমাইয়া। তিনি বলেন, তার ভাই আলমগীর ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বগুড়ার ডিবি কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি-গাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন- এমন অভিযোগের প্রথম অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক রবীন্দ্রনাথ চাকী।
২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথের কাছে আলমগীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও আয়ের উৎসসংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দেন। এতে ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন এসআই আলমগীর। রবীন্দ্রনাথ অবসরের পর ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তদন্তের দায়িত্ব পান সুদীপ কুমার চৌধুরী। তাকেও আয়-ব্যয় বিবরণী ও যাবতীয় কাগজপত্র দেয়া হয়।
রুমাইয়া বলেন, সুদীপ কুমার অভিযোগের দায় থেকে মুক্তি দেয়ার নাম করে আইনজীবী কামাল উদ্দিনের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। ভাইয়ের চাকরি ও সম্মানের কথা ভেবে দুদক কর্মকর্তা সুদীপ কুমার চৌধুরীকে ৫ লাখ ৮০ হাজার দিয়েছেন। টাকাগুলো কয়েক দফায় দেয়া হয়। আবার এ টাকা নেয়ার বিষয়ে ভাইকে জানাতেও নিষেধ করা হয়। পরে দেখা যায় সুদীপ কুমার তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। তখন বিষয়টি অধিদপ্তরে জানালে সুদীপ কুমারকে রাজশাহী বদলি করা হয়।
দুদক কর্মকর্তাকে টাকা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে রুমাইয়া বলেন, টাকা না দিলে মামলায় আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয়ভীতি ও হুমকি দেন সুদীপ কুমার। বিভিন্ন সময়ে ফোনে বলা এসব কথার রেকর্ড তার সংগ্রহে আছে।
রুমাইয়া শিরিন বলেন, এসব বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে বগুড়া দুদক কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের কাছে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া একই রকম অভিযোগ দুদক চেয়ারম্যান বরাবর দেন। কিন্তু লিখিত অভিযোগ করার পরেও কোনো প্রতিকার পাননি।
সুদীপ কুমার চৌধুরী বর্তমানে কুড়িগ্রামে কর্মরত আছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল তার ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিষয়টি জানা ছিল না। এসআই আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে। যদি সত্যিকার অর্থে ঘুষের লেনদেন হয়ে থাকে, তাহলে তা মোটেও ঠিক হয়নি।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা