গাইবান্ধা থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের নিয়মিত আন্তনগর ট্রেনের সংখ্যা দুটি। দীর্ঘ দেড় যুগেও ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি, ঈদেও থাকে না বিশেষ ট্রেন। ফলে অন্য সময়ের মতো ঈদের ভোগান্তি বাড়ে এ জেলার যাত্রীদের।
তবে রেলসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নতুন কিংবা বিশেষ ট্রেন নয়, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ রুটের ‘আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেস’ ও ‘আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দুটি করে অতিরিক্ত বগি (কোচ) বাড়ানোর কথা রয়েছে।
গাইবান্ধা থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগে লালমনি ও রংপুর এক্সপ্রেস সপ্তাহে ছয় দিন চলাচল করে। লালমনির ৫৯৩টির মধ্যে গাইবান্ধার জন্য বরাদ্দ আসন ৮৭টি। রংপুর এক্সপ্রেসের ৮৪০টির মধ্যে বরাদ্দ মাত্র ৬৭টি।
জেলার সচেতন নাগরিক ও যাত্রীরা বলছেন, দীর্ঘ এক যুগেও গাইবান্ধার জন্য আসন বাড়ানো হয়নি। দুটি ট্রেন মিলিয়ে ১৫৪টি আসন যথেষ্ট নয়। রেল কর্তৃপক্ষ এদিকে খেয়াল না রেখে নানা অজুহাতে আন্তবিভাগ চলাচলের দুটি ট্রেনও বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এ সংকট বেশি প্রকট হয় ঈদযাত্রায়। রেলে যথেষ্ট আসন না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে বাড়িতে আসেন। একইভাবে কর্মস্থলে ফিরে যান। এ সময় দুর্ঘটনার শিকার হলে ঈদযাত্রা পুরো পরিবারের জন্য বিষাদের হয়।
সম্প্রতি গাইবান্ধা স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন হাজ্জাজ মণ্ডল নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, আসন না পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। বেশি ভোগান্তি হয় ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ে। ঈদে হাজার হাজার মানুষ গাইবান্ধায় আসবেন। ঘরে ফিরতে ট্রেন না পেয়ে তারা বিভিন্নভাবে আসার চেষ্টা করেন। ফলে প্রতিবছরই সড়ক দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয় অনেককেই।
গাইবান্ধা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ঢাকার সঙ্গে উত্তারঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ‘কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস’ চালু করা হয়। ট্রেনটি গাইবান্ধা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ার সান্তাহার জংসন হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। এদিক থেকেও গাইবান্ধার মানুষ অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এর আগে নতুন ট্রেন চালুর বিপরীতে রামসাগর ও লোকাল ৪৮১ নামের দুটি ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে জেলার মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। গাইবান্ধার যাত্রী সংখ্যার কথা চিন্তা করে এখানে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিশেষ ট্রেন চালু করা খুবই জরুরি।
গাইবান্ধা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, গাইবান্ধা থেকে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রী সংখ্যা বিবেচনায় দুটি নয়, কমপক্ষে চারটি ট্রেন দরকার। ঢাকা থেকে এই রুটে নতুন করে চার-পাঁচটি ট্রেন যোগ করা হলে যাত্রীদের টিকিটের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল, রাজশাহী) ওয়াশিম কুমার মুঠোফোনে দৈনিক বাংলাকে বলেন, রেল ভবনের বাণিজ্যিক বিভাগ সড়ক পথের নাজুক অবস্থা এবং রেলে চলাচলে দরিদ্রপ্রবণ এলাকার যাত্রীদের আধিক্য বেশি থাকার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে নতুন ট্রেন চালুর সুপারিশ করে। গাইবান্ধা রুটে নতুন করে আরও দুটি ট্রেন দেয়া হলে নির্বিঘ্নে চলবে কিন্তু বর্তমানে রেলওয়ের সক্ষমতা কম। তবে আগামীতে বাড়তেও পারে।
ওয়াশিম কুমার বলেন, সক্ষমতা বাড়লে এই রুটে নতুন ট্রেন দেবে রেল মন্ত্রণালয়। তবে বর্তমানে নতুন করে কোনো ট্রেন দেয়া হচ্ছে না।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা