টমাস টুখেলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ার ছিল পেপ গার্দিওলার। সেটা ম্যানচেস্টার সিটি কোচের নিজের চোখে যতটা, তার চেয়েও বেশি ইংলিশ সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে। ম্যাচের আগে গত কয়েকদিন এ নিয়েই তো যত আলোচনা – ২০২১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে টুখেলের চেলসির কাছে হেরেই ম্যান সিটিতে পূর্ণতা পাওয়া হয়নি গার্দিওলার।
ম্যান সিটির একটা বার্তা দেয়ার ছিল। বায়ার্ন মিউনিখ প্রায় সব মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে বড় ফেবারিট দলগুলোর একটি, ম্যান সিটি হাজারো চেষ্টায়ও এখনো কূলীন হতে পারেনি। চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিতলে নাকি তা হওয়া যায় না। উল্টো প্রতি মৌসুমেই অদ্ভুতুড়ে সব উপায়ে বাদ পড়ে অনেকটা হাসির পাত্রই হয়ে গেছে। প্রতি মৌসুমেই সিটির চ্যাম্পিওনস লিগ জেতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়, কিন্তু প্রতি মৌসুমেই সিটিকে ঘিরে ‘ওরা একটা পর্যায়ে গিয়ে দম হারাবেই’ অনুভূতিও ছড়িয়ে থাকে ইউরোপে।
কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে কাল বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে সিটি যেন বার্তা দিয়ে রাখল, এবার এতটা হেলায় তাদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাচ্ছে না। সিটি কোচ গার্দিওলা অবশ্য সতর্ক, সেমিতে এক পা দিয়ে রাখার আলোচনায় তার আগ্রহই নেই।
২০২১ ফাইনালে যাকে না খেলানো নিয়ে হাজারো সমালোচনা শুনতে হয়েছিল গার্দিওলা, যাকে না খেলানোতেই ম্যাচটা সেদিন গার্দিওলা হেরে গিয়েছিলেন বলে মত সবার – সেই রদ্রির গোলেই বিরতির আগে এগিয়ে যায় সিটি। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দারুণ বাঁকানো শটটা চোখে লেগে থাকবে অনেকদিন।
আর ৭০ থেকে ৭৬ – এই ৭ মিনিটে সিটির দুই গোলে জড়িয়ে আর্লিং হলান্ড। এমন রাতগুলোতে পার্থক্য গড়ে দিতেই তো ইউরোপের প্রায় সব ক্লাবের সঙ্গে যুঝে তাকে মৌসুমের শুরুতে নিয়ে এসেছিল সিটি। ৭০ মিনিটে বের্নার্দো সিলভাকে দিয়ে গোল করালেন হলান্ড, ছয় মিনিট পর গোল করলেন নিজেই।
৩ ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডে ৪ জনের ‘বক্স’, সামনে দুই উইঙ্গার ও স্ট্রাইকার – সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পেতে থাকা কৌশলেই দল সাজিয়েছেন গার্দিওলা। সপ্তাহ দুয়েক আগে বায়ার্নের দায়িত্ব নেয়া টুখেল যে গার্দিওলার সিটির সামনে দাঁড়ানোর আগে আরও কিছুদিন সময় পেলে খুশি হতেন, সেটা সংবাদসম্মেলনে টুখেল নিজেই জানিয়েছেন। তবে ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজানো টুখেলের বায়ার্ন একেবারে ছেড়েও কথা বলেনি।
ম্যাচে সিটির দাপটই বেশি ছিল, তবে বেশিরভাগ সময়েই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে বলের গতিপথ ছিল দ্বিমুখী। প্রথমার্ধে হলান্ড একটা দারুণ সুযোগ পেয়েও শট মারলেন বায়ার্ন গোলকিপার সমারের গায়ে, উল্টোদিকে রুবেন দিয়াসের ব্লক আটকাল জামাল মুসিয়ালার শট। ২৭ মিনিটে রদ্রির ওই গোলের পর বিরতির আগ পর্যন্ত বায়ার্নেরই দাপট বেশি ছিল, এর মধ্যেও পা বাড়িয়ে গুন্দোয়ানের একটা শট অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়ে দেন সমার।
দ্বিতীয়ার্ধে লিরয় সানের দুটি শট পোস্ট ঘেঁষে গেল, ম্যাটাইস ডি লিখটকে গোলবঞ্চিত করেন সিটি গোলকিপার এদেরসন, খুব কাছ থেকে কিংসলে কোমানের হেড ফেরে সিটি রক্ষণে। এমন দাপুটে শুরুর পরও গোল করতে না পারার ব্যর্থতা এমনিতেই পোড়াত বায়ার্নকে, হলান্ড নিশ্চিত করে দিলেন, এই ব্যর্থতাই ভোগাবে বায়ার্নকে।
৭০ মিনিটে তার দারুণ মাপা ক্রস থেকে গোল বের্নার্দো সিলভার, ছয় মিনিট পর স্টোনসের হেডে নামিয়ে দেয়া বল ধরে গোল হলান্ডের নিজেরই। হলান্ডের গোলের আগে-পরে আলভারেস দুবার গোলবঞ্চিত হলেন, রদ্রির হেডও দারুণভাবে ঠেকান সমার।
কিন্তু এমন দাপুটে ম্যাচের পরও সিটি কোচ গার্দিওলা সতর্ক, ‘আমি ওখানে তিন বছর ছিলাম। এটা জানি, ইউরোপে এই দলটা স্পেশাল। এমন মানের দলকে বিদায় করতে গেলে একটি নয়, আপনাকে দুটি ভালো ম্যাচ খেলতে হবে। জানি ওখানে আমাদের কী করতে হবে। ওরা একটা, দুটি, তিনটা গোলও করে ফেলতে পারে!’
অন্য ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে বারেল্লা ও লুকাকুর গোলে বেনফিকার মাঠে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে ইন্টার মিলান।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা