আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে সরকার গ্যাস-বিদ্যুত-সারের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে একদিকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে এবং সেই বাড়ানোর পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিবর্গের পরিবারের মাঝে’ দলের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ-২০২৩ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন আবার কৃষকদের যে সার সেই সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে কৃষকদের কষ্ট হবে। কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে তাকে এটা মেনে নিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোন উন্নয়ন, কার উন্নয়ন? এই উন্নয়ন হচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর নিজেদের উন্নয়ন। আজকে এই যে বৈষম্যটা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশে। একদিকে সেই বিশাল বিশাল অংকের মালিক–তারা বাড়ি-গাড়ি সব বিলাস-বৈভব নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে এবং বাড়ি ঘর কিনে থাকছে। অন্যদিকে আমাদের সাধারণ মানুষ, তারা দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়ার জন্যে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, লড়াই করতে হচ্ছে। তাও সে পুরোপুরি পাচ্ছে না। কারণ জিনিসপত্রের দাম তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং এই অত্যাচার-নির্যাতন-গুম-খুন করেই তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। আজকে সমগ্র দেশ বলতে কি একটা বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। আপনি খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন হত্যা-খুন-গুম চলছে।’
গত ১৪ বছর ধরে দেশে একটা ভয়াবহ অবস্থা চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সারাদেশে আমার মনে হয়, কমপক্ষে ৭০০ এর ওপরে আছেন, যারা গুম হয়ে গেছেন, সহাস্রাধিক গণতান্ত্রিক কর্মী আছেন যারা খুন হয়েছেন। এই একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে গত ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এভাবে গুম-খুন হয়ে, নির্যাতিত হয়ে আর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে প্রাণ দিয়েছে ১৭ জন বিএনপি নেতা-কর্মী।’
বাংলাদেশে গুম-খুন আওয়ামী লীগ নতুন করে এনেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একেবারে নির্মূল করে দেয়ার জন্য, নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য এই গুম কথাটা আগে বাংলাদেশের মানুষ জানতো না। এটা ল্যাটিন আমেরিকায় আমরা শুনেছি, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স, তুলে নিয়ে গিয়ে নাই হয়ে যাওয়া। এটা বাংলাদেশে নতুন করে আওয়ামী লীগ এনেছে। যদিও আমাদের মনে আছে, স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখনো এরকম গুমের অনেক ঘটনা ঘটেছিল। প্রকাশ্যে ঘটেছে, এভাবে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের গঠনটাই এরকম। একদিকে সন্ত্রাস আরেকদিকে দুর্নীতি। এই দুটার মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকে।’
সরকারকে রুখে দাঁড়াতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। গুম হওয়া পরিবারের এই ছোট্ট মেয়ের কান্না, সেই কান্নাকে সঙ্গে নিয়ে সেটাকে ক্রোধে পরিণত করে আমাদের অবশ্যই এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে ফেলতে হবে। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটা মুক্ত স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে, যেখানে এই ধরনের গুমের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, যেখানে মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে স্বাধীনভাবে থাকতে পারবে।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ‘গুম হওয়া’ ছাত্রদলের মাহমুদুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর ও সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার সাফা বক্তব্য দেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা