আপডেট : ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ১৮:৫০
ছয় বছরেও ওঠেনি নিষেধাজ্ঞা, জেলে পল্লিতে দুর্ভোগ
রহমত উল্লাহ, টেকনাফ (কক্সবাজার)

ছয় বছরেও ওঠেনি নিষেধাজ্ঞা, জেলে পল্লিতে দুর্ভোগ

নাফ নদীর তীরে দীর্ঘ সময় নোঙর করে রাখা নৌকা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। ছবি: দৈনিক বাংলা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা কালা মিয়া। নাফ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ৬৫ বছর বয়সী কালা মিয়া মাছ শিকার ছাড়া অন্য কাজেও তেমন দক্ষ না। ইয়াবা পাচার বন্ধের অজুহাতে প্রায় ছয় বছর ধরে নাফ নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ থাকায় দুর্দিন চলছে তার পরিবারে।

শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় নাফ নদীর তীরেই ত্রিপলে মোড়ানো কালা মিয়ার বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ার এলেই পানি ঢোকে বাড়িতে। কালা মিয়া বলেন, নাফ নদীর ১০ হাজার জেলে এখনো মাছ ধরার অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছেন।

দ্বীপের আরও কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ২০১৭ সালের আগস্টে হঠাৎ করেই নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক মাছ ধরার নৌকা ঘাটে নোঙর করা আছে। দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় বর্তমানে এসব নৌকার অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়েছে। এর ফলে অভাব-অনটনে দিন পার করছে নাফ নদীর ১০ হাজার জেলে পরিবার। যদিও উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যেক জেলেকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। তবে এ চাল তাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

জেলেরা বলছেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে এমনিতেই নাফ নদীতে নানা সময়ই মাছ ধরার ওপর বিজিবির বিধিনিষেধ থাকে। এর মধ্যে আবার ইয়াবা পাচারের অজুহাতে সেখানে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। অথচ দেশে ইয়াবা আসা বন্ধ হচ্ছে না। নিষেধাজ্ঞার প্রায় ছয় বছর পরও নদীতে জাল ফেলার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না তারা। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে।

দ্বীপের এক বোট মালিকের স্ত্রী জুহুরা খাতুন (৪০) বলেন, রোহিঙ্গা ও ইয়াবার কারণে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নাফ নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজারও জেলে পরিবারকে এভাবে বিপদে ফেলা অন্যায়।

টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার দুজন জেলে বলেন, ‘১০ কেজি চাল নিয়ে কয়দিন চলব? আমরা নাফ নদীতে মাছ শিকার করে বাঁচতে চাই। নিষেধাজ্ঞার আগে বছরের পর বছর ধরে নাফ নদীতে বিহিঙ্গি জাল পেতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কোনো কালেই এভাবে দীর্ঘদিন মাছ শিকার বন্ধ থাকেনি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে বলেন, তারা এ পেশা (মাছ শিকার) ছাড়তে পারবেন না। প্রয়োজনে এর জন্য তারা বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেবেন। নাফ নদীতে মাছ ধরার অনুমতি পেতে এরই মধ্যে ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর বলেন, ‘এখানকার ৮০ শতাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা মাছ শিকার। ইয়াবা কারবারিদের দোহাই দিয়ে গরিব জেলেরা না খেয়ে মারা যাবে, তাদের জীবিকা বন্ধ করে দেবে, এটা মেনে নেয়া সম্ভব না।’

নুরুল বশর আরও বলেন, ইয়াবা কারবারিরা ঠিকই টাকা-পয়সা দিয়ে মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ব্যবসা চলমান রাখছে। কিন্তু গরিব জেলেদের কোনো ঠাঁই হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ, কোনো একটা ব্যবস্থা করা হোক।

টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের নির্দেশ আগের মতোই বলবৎ থাকায় এখন পর্যন্ত নাফ নদীতে মাছ শিকারের কোনো সুযোগ নেই। তবে অনুমতি মিললে মাছ শিকার করতে পারবে জেলেরা। মাদক ও মানব পাচার প্রতিরোধে বিজিবি সর্বদা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে।

টেকনাফ ইউএনও মো. কামরুজ্জামান বলেন, অনেক জেলে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চিঠি পাঠানো হবে। তবে ভুক্তভোগী জেলেদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘প্রকৃত জেলেদের দিনের বেলায় মাছ শিকারের সুযোগ দেয়া দরকার। তাদের পক্ষে থেকে প্রত্যেক জেলেকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে।’