আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০৪
ব্যবসায়ীদের আহাজারি: নিমেষেই সব আশা পুড়ে ছাই হয়ে গেল
বিশেষ প্রতিনিধি ও প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

ব্যবসায়ীদের আহাজারি: নিমেষেই সব আশা পুড়ে ছাই হয়ে গেল

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর নিজের দোকান পুড়ে যাওয়ায় সব হারিয়ে কেঁদে ওঠেন এই ব্যবসায়ী। ছবি: ফোকাস বাংলা

ছয় বছর ধরে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন দুই ভাই আব্দুস সাত্তার ও শফিক ইসলাম। স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে দোকানে নতুন মালামাল তুলেছিলেন নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার। ঈদের পর লাভের টাকায় গহনা ছাড়িয়ে নেবেন। সেই আশা পুড়ে ছাই হয়ে গেল এক নিমেষেই। নিউ সুপার মার্কেটের সামনে বিলাপ করছিলেন তিনি। এখন কীভাবে কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।

শুধু সাত্তার আর শফিকই নয়, নিউ সুপার মার্কেটের হাজার দুয়েক ব্যবসায়ীর অবস্থা একই। ঈদের আগে অনেকেই ধারদেনা কিংবা মূলব্যান সম্পদ বন্ধক বা বিক্রি করে দোকানে মালামাল তোলেন। রমজানের ঈদের আগে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় এই মার্কেটে। ক্রেতার চাপে তিল পরিমাণ ঠাঁই থাকে না সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। অন্য সময়ের চেয়ে লাভও হয় অনেক বেশি। সবাই ঈদের পর সব ধারদেনা পরিশোধ করেন। ঈদের আর কয়েক দিন বাকি। বেচাকেনাও জমে উঠেছিল। কিন্তু পোড়া কপাল হয়ে গেল মুহূর্তেই। গতকাল শনিবার রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুনে তাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

শনিবার সকাল থেকে নিউ সুপার মার্কেটের সামনে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কেউ কেউ মার্কেটের নিচতলা বা দোতলা থেকে মালামাল বের করার চেষ্টা করছেন। কেউবা সড়কে দাঁড়িয়ে অপলক তাকিয়ে আছেন চোখের সামনে নিজের স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার অবলম্বন পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখে। কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেব। অনাগত ভবিষ্যতের ভাবনায় কেউ হয়ে আছেন স্থবির।

আব্দুর সাত্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে দৈনিক বাংলাকে বলছিলেন, ‘সারা বছরে রমজানেই আমাদের বিক্রি বেশি হয়। রোজার শেষ ১০ দিনই আমাদের ব্যবসা হয়। কিন্তু সর্বনাশা আগুনে সব পুড়ে শেষ হয়ে গেল। এখন আমি কী করে সংসার চালাব।’

ডুকরে কেঁদে উঠলেন সাত্তার। চোখ মুছে জানালেন, গত রাত সোয়া ৩টার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করে যান। ভাইয়ের ফোন পেয়ে সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এসে দেখেন, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তবে এসেই ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ঠিক সময়ে ঢুকতে পারলে কিছু হলেও মালামাল বের করতে পারতেন বলে আফসোস করেন তিনি। বলেন, প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।

ব্যবসায়ী আবু সাঈদ আহাজারি করছিলেন, নিউ সুপার মার্কেটের ফুট ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে। মার্কেটে তার চারটি দোকান ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেননি কিছুই। সাঈদ বলছিলেন, ‘চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কিছুই রক্ষা করতে পারলাম না।’

সাঈদের মতো অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ক্ষতিগ্রস্ত নিউ সুপার মার্কেটের সব ব্যবসায়ীই। গতকাল সকালে আগুনের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরাও হাজির হয়েছেন মার্কেটের সামনে। ঢাকা কলেজের ফুটপাতের সামনে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাবিবা খাতুন নামে এক নারী। তাকে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন আরেক নারী। হাবিবা খাতুন জানান, এই মার্কেটের তৃতীয় তলায় তার স্বামী নুরুল ইসলামের একটি দোকান ছিল। এই দোকানের আয় দিয়েই তাদের সংসার চলত। ধারদেনা করে ঈদ উপলক্ষে নতুন মালামাল ওঠানো হয়েছিল।

আহাজারি করে হাবিবা খাতুন বলছিলেন, ‘আগুনে তো সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমরা খাব কি? আর ধারদেনা পরিশোধ করব কীভাবে? পোলাপান মানুষ করব কীভাবে?’

শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনা ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাড়ে তিন ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সেখানে মালামাল পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। দোতলা ও নিচতলা থেকে কিছু মালামাল উদ্ধার করতে পারলেও তৃতীয় তলার দোকানপাট সব পুড়ে গেছে।