আপডেট : ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ ১৪:১৬
‘সংশোধন ছাড়া পাস হলে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে ‍উপাত্তা সুরক্ষা আইন’

‘সংশোধন ছাড়া পাস হলে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকবে ‍উপাত্তা সুরক্ষা আইন’

ছবি: দৈনিক বাংলা

উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩=এর খসড়ার সমালোচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছে, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের যে খসড়া করা হয়েছে, সেখানে আপত্তির জায়গাগুলো সংশোধন না করে পাস করলে আইনটি ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় চলে যাবে। তখন আইনটি হবে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রক আইন।

সোমবার ধানমন্ডির টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এ আইনটিরও অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আইনটির নামকরণের সমালোচনা করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনের শিরোনামে ‘উপাত্ত’ ব্যবহার করলে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করবে। তাতে ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা করারও সুযোগ থাকায় অপপ্রয়োগ হবে।

দ্বিতীয়ত এ আইনে ব্যক্তির সংজ্ঞার এত ব্যাপকতা রয়েছে যে, আইনটিকে অবাস্তব অবস্থানে নিয়ে গেছে। এতে আইনটি বাস্তবায়ন অযোগ্য হয়ে পড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আইনটিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বিষয়টি নজরদারির জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হলেও আলোচ্য খসড়ায় উপাত্ত এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার নিয়োগ দেবে সরকার। এই এজেন্সিকে আবার যেকোনো নিয়ন্ত্রক বা প্রক্রিয়াকারীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তির উপাত্তে, সার্ভারে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে। এমনকি উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার এবং উপাত্ত মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর তদন্ত শুরু করার ক্ষেত্রে ‘মহাপরিচালকের কাছে প্রতীয়মান হলে’ এমন বিধান কার্যত আইনটি যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার বিষয়টি সরকার নিযুক্ত এবং আবশ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রিত এক ব্যক্তির ইচ্ছাধীন করা হয়েছে।
ফলে সরকার নিজেই যেখানে উপাত্ত ব্যবহারকারী এবং প্রক্রিয়াকারী সেখানে সরকার যে আইনটি যথাযথভাবে মানছে সেটি আরেকটি সরকারী সংস্থা দিয়ে কীভাবে নিশ্চিত করবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি বলেন, এই আইনের ফলে ছোট ও মাধ্যম পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের জন্য উপাত্তের স্থানীয়করণ ব্যয়বহুল হওয়ায় তারা প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে। পাশাপাশি সব পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার ব্যয়ও বাড়বে। শুধু তাই নয়, এর ফলে ডিজিটাল রপ্তানি ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

এ ছাড়া কোনো কোম্পানি এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংগঠনের ক্ষেত্রে কোম্পানির প্রত্যেক মালিক, প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ম্যানেজারসহ কোম্পানির যেকোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ওই অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন, যা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে।

এই অংশের সমালোচনা করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধারার মাধ্যমে ফৌজদারি আইনের অপরাধ প্রমাণের দায়সংক্রান্ত নীতির সরাসরি বিপরীত ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে নাগরিকের অধিকার নিয়ে কাজ করা সব প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ দেশি-বিদেশি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনগত ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।

দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের হয়রানির যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে উপাত্ত সুরক্ষা আইন দিয়েও তেমন কিছু হবে না, সে নিশ্চিয়তা কে দেবে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। এভাবে আইনটি পাস হোক সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, জাতীয় মানদণ্ডে তো নয়ই।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলম বলেন, এই খসড়াটি যদি সংশোধন না কারে হুবহু পাস হয়ে যায়, তাহলে ক্ষমতাসীনরা চাইলে গণমাধ্যমকেও হয়রানি করতে পারবেন। তার সব ব্যবস্থা সেখানে আছে।

প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের’ খসড়ায় ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ও স্বাধীন মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও দেখছেন তারা।

এ জন্য সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আইন সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে একসঙ্গে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রাগ্রসর এবং সময়োপযোগী জনবান্ধব আইন প্রণয়নের উদাত্ত আহ্বান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, টিআইবির আউটরিচ কমিউনিকেশনের পরিচালক ড. তরিকুল ইসলাম।