অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণে বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করে তা বন্ধে শুরু হয়েছে নানামুখী কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন ব্যাংক। কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বেড়েছে ব্যাংকগুলোর অর্থায়ন। আবার টেকসই অর্থায়নের আওতায় এমন প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে, যেখানে ব্যবহার হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ। ফলে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শিল্পের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। ঝুঁকি কমাতে টেকসই ও সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্য বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব খাতে অর্থায়নে নজর দিচ্ছে।
টেকসই প্রকল্প
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তিন মাসে টেকসই প্রকল্পে মোট ৪১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিতরণ করেছে ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো মোট বিতরণের ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ৩১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। ছয় মাসের ব্যবধানে টেকসই প্রকল্পে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করেছে ৩০ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছর মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করে ২৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করে ৮৫৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ঋণ বিতরণের এই ঊর্ধ্বমুখী হার ইঙ্গিত দিচ্ছে, সবুজ অর্থায়নের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের ৭৩ শতাংশ নিয়েছে পুরুষ আর ২৭ শতাংশ নারী।
সবুজ অর্থায়ন
চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩ অর্থবছরের তিন মাসে (অক্টোবরে-ডিসেম্বর) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মোট ৪ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৬২৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণের ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা ব্যাংকগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ৩১০ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদি ঋণের ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করে, যা ব্যাংকগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করে ৪০৯ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদি ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এই খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ দেয়ার শর্ত রয়েছে।
টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে দুই বছর ধরে বিভিন্ন মানদণ্ডে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) টেকসই বা সাসটেইনেবল রেটিং বা মান প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শীর্ষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
চলতি ডিসেম্বর শেষ পর্যন্ত সবুজ অর্থায়নে বিদেশি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ দশমিক ১৫ শতাংশ অর্জন করেছে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকায় দ্বিতীয় যমুনা ব্যাংক ৫২ দশমিক ১ শতাংশ। এরপর আছে যথাক্রমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৪২ দশমিক ৯৬ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংক ২৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, ইসলামী ব্যাংক ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, সিটি ব্যাংক ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, বেসিক ব্যাংক ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, আইএফআইসি ৫ দশমিক ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫ দশমিক শূন্য ০ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংক ৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা