ঈদের ছুটি মানে এখন কেবল আর গ্রামের বাড়ি ছুটে যাওয়া নয়। বরং মানুষজন এখন নতুন নতুন স্থানে ভ্রমণ করে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে উন্মুখ। তাই তো লম্বা ছুটিতে কেউ পরিবার নিয়ে পাহাড়ে, কেউবা আবার সাগরপানে ছুটে যান। সবুজে ঘেরা চা-বাগানও থাকে তাদের ভ্রমণের তালিকায়। আর প্রতিবছর তাই এ সময় ভ্রমণপিয়াসীদের গ্রহণে প্রস্তুত হয়ে ওঠে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।
কক্সবাজারে হোটেল-মোটেলে ছাড়
ঈদের টানা ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ হাজার পর্যটক টানার অপেক্ষায় কক্সবাজারের হোটেল ব্যবসায়ীরা। তাই ঈদে পর্যটকদের জন্য হোটেল কক্ষের ভাড়ায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে পর্যটক বরণের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছেন তারা।
কক্সবাজার শহরে পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলোতে রং লাগানো, ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। ঈদের ছুটি পাঁচ দিন হলেও টানা সাত দিন কক্সবাজারে পর্যটক থাকবেন বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘ঈদের টানা সাত দিনের ছুটিতে সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে বলে আশা করছি। কেউ যদি ছাড় না দেন, পর্যটকরা যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি ছাড়ের ব্যবস্থা করে দেব।’
কলাতলী-মেরিনড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। সামনে হয়তো আরও বাড়বে।
আবাসিক হোটেল সী গালের সহকারী ব্যবস্থাপক নূর মোহাম্মদ রাব্বী জানান, অন্যান্য আবাসিক প্রতিষ্ঠানের মতো ঈদ ঘিরে পর্যটক বরণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারা। খুব বেশি পর্যটক না এলেও আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন, এমনটিই আশা করছেন। এর জন্য আলাদা আলাদা বিশেষ প্যাকেজও রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার শেহরিন আলম জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্পটে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সৈকতের প্রবেশপথে তল্লাশিচৌকি স্থাপন, সৈকতে পুলিশ পোশাক ছাড়াও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। এবং সৈকতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য দল গঠন করা হয়েছে।
শেরপুরে ইকোপার্কে সাজ সাজ রব
শেরপুরের গারো পাহাড়ে গজনী অবকাশ ও মধুটিলা ইকোপার্ক নামে দুটি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া আছে পানিহাটা, রাজারপাহাড়সহ একাধিক দর্শনীয় স্থান। তাই ঈদসহ নানা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষের আকর্ষণ গারো পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক, ওয়াটার কিংডম ও প্যারাডোবা, ঝুলন্ত ব্রিজ, রুফওয়ে, জিপলাইনার, কেবল কার, প্যাডেল বোর্ড, সাম্পান নৌকা, ঝরনাধারাসহ আকর্ষণীয় রাইডস। এ ছাড়া সীমান্তের এপার ও ওপারের পাহাড়গুলোর লুকোচুরি খেলা তো আছেই।
এবারের ঈদে অন্তত অর্ধলাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এ আশায় নানা প্রস্তুতি নিচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ী ও ইজাদাররা।
ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে আমাদের যে রাইডগুলো আছে, সেগুলো রং করা ও ধোয়ামোছা করছি।’
শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটে। গারো পাহাড়ের এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপদেই আনন্দ উপভোগ করবেন দর্শনার্থীরা।
সিলেটে পর্যটক সমাগম নিয়ে শঙ্কা
তবে সিলেটে এবার বিপরীত চিত্র। হোটেল-মোটেলগুলোতে আগাম বুকিং হয়নি তেমন। এখানকার হাওর, পাহাড়, ঝরনা, নদী আর চা-বাগান দেখতে সারা বছর পর্যটকের ভিড় থাকলেও এবার যেন তাতে ভাটা পড়েছে।
পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ মানুষের হাতে এখন তেমন টাকা নেই। তাই তারা ঘুরতে বের হচ্ছেন না। আর যে শ্রেণির হাতে টাকা আছে তাদের বেশির ভাগ বেড়াতে দেশের বাইরে চলে যান। এ ছাড়া ঈদের ছুটির বেশির ভাগ অংশ ঈদের আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার পর্যটক সমাগম আশানুরূপ হচ্ছে না।
এর পরও প্রস্তুত হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। জাফলং, লাউয়াছড়া, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বিছনাকান্দি, রাতারগুলের আকর্ষণে অনেকেই আসবেন এখানে।
জাফলংয়ের গুচ্ছগ্রাম এলাকার গ্রিন ভিউ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী বাবুল আহমদ বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদ বা বড় ছুটিতে আগে থেকেই আমাদের সব কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। তবে এবার তেমন একটা বুকিং হয়নি। তবু আমরা ঈদে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুরো রিসোর্ট নতুনভাবে সাজিয়েছি।’
সিলেটের সবচেয়ে বেশি পর্যটন কেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলায়। জাফলং ছাড়াও দেশের দুর্লভ জলারবন রাতারগুল, পাথরের বিছানা বিছানো বিছনাকান্দি, স্বচ্ছ জলের লালাখাল, পাহাড়ি ঝরনার পাংথুমাইয়ের অবস্থান এই উপজেলায়ই। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ঈদে পর্যটকদের বরণ করে নিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত। সব পর্যটনকেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায়ও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকরা যাতে বেড়াতে এসে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। আশা করছি, আগের মতো না হলেও কিছু পর্যটক আসবেন।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা