ডলার ও কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতের বড় কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। যদিও চলতি অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) আগের দুই প্রান্তিকের তুলনায় মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের মুনাফা কমে হয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ।
কোম্পানির তৃতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মুনাফা করেছে প্রতি শেয়ারে ৭ টাকা ৭৮ পয়সা। আগের বছর এই সময় তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ১২ টাকা ৩৪ পয়সা।
অর্থাৎ এই সময় কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ টাকা ৫৬ পয়সা বা ৩৭ শতাংশ কম মুনাফা করেছে।
আর ২০২২-২০২৩ (জুলাই-মার্চ) অর্থবছরের নয় মাসের হিসাবে ওয়ালটন প্রতি শেয়ারে মুনাফা করেছে ৮ টাকা ২৫। আগের বছর এই সময় তাদের শেয়ার প্রতি মুনাফা ছিল ২৭ টাকা ৭ পয়সা। এই সময় কোম্পানিটির মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ টাকা ৮২ পয়সা বা ৭০ শতাংশ কম হয়েছে।
ওয়ালটন জানিয়েছে, তাদের মুনাফা কমার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ কাঁচামালের দাম আর পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া। এর ফলে তাদের পণ্য তৈরির খরচ বেড়ে গেছে।
বেশির ভাগ কাঁচামাল দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া তাদের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোম্পানিটি চলতি অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান দেখিয়েছিল ১ টাকা ৫২ পয়সা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফা দেখিয়েছিল ২ টাকা। সেই হিসেবে তাদের তৃতীয় প্রান্তিক কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু ৯ মাসের হিসাবে মুনাফা ৭০ শতাংশ কম।
তবে, মুনাফা কমলেও শেয়ার প্রতি নগদ অর্থ প্রবাহ বেড়েছে ওয়ালটনের।
২০২২-২০২৩ (জুলাই-মার্চ) অর্থবছরের নয় মাসের হিসাবে ওয়ালটনের প্রতি শেয়ারে নগদ অর্থ প্রবাহ হয়েছে ৭৩ টাকা ৭০ পয়সা। আগের নয় মাসে শেয়ারে নগদ অর্থ প্রবাহ ছিল ঋণাত্বক ১৬ টাকা ৩৬ পয়সা। নগদ অর্থ প্রবাহ বাড়ার কারণ হিসেবে ওয়ালটন বলেছে, তারা নিজেদের মজুত শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজার থেকে তাদের পাওনা টাকা তুলেছে আগের তুলনায় বেশি। আর পাওনাদারদের টাকা দিয়েছে কম। তাই নগদ টাকা বেড়ে গেছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ওয়ালটনের প্রতি শেয়ারে সম্পদ মূল্য হয়েছে ২২৪ টাকা ৫৭ পয়সা। গত বছর শেষে এই সম্পদ মূল্য ছিল ২৩১ টাকা ৩৪ পয়সা। ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে। ২০১৮ সালে ওয়ালটন ৩৫২ কোটি ৩২ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। ২০১৯ অর্থবছরে মুনাফা হয় ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০২০ অর্থবছরে মুনাফা হয় ৭২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লভ্যাংশ দেয় হয় প্রতি শেয়ারে ২০ টাকা। ২০২১ অর্থবছরে মুনাফা হয় ১ হাজার ৬৩৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। লভ্যাংশ দেওয়া হয় প্রতি শেয়ারে ২৫ টাকা। ২০২২ অর্থবছরে মুনাফা হয় ১ হাজার ২১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। লভ্যাংশ দেওয়া হয় প্রতি শেয়ারে ২৫ টাকা। পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার।
ওয়ালটনের বর্তমান বাজার মূলধন ৩১ হাজার ৭৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ৯ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা