আপডেট : ২ মে, ২০২৩ ২৩:০৯
শেখ হাসিনার মধুর প্রতিশোধ
বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা

শেখ হাসিনার মধুর প্রতিশোধ

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে পদ্মা সেতুর বিশাল একটি ছবি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা

দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগে অনেক টালবাহানার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ফিরিয়ে দিয়ে পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই অবকাঠানো প্রকল্পটি। প্রায় এক বছর ধরে এই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল করছে। দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল করেছে। কিছুদিন পর ছুটবে ট্রেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের হাতে তুলে দিলেন সেই পদ্মা সেতুর বিশাল একটি ছবি। এ যেন পদ্মা সেতু নিয়ে শেখ হাসিনার মধুর প্রতিশোধ।

গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠানের পর এই ছবি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। মে দিবসের কারণে ছুটি থাকায় মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিক পত্রিকা বের হয়নি। তবে পত্রিকাগুলোর অনলাইন, অন্যান্য অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশনগুলো ফলাও করে প্রচার করেছে এই ছবিসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার নানা খবর। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘বাইরের চাপে দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল। কানাডার আদালতে তা প্রমাণ হয়েছে।’

সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের উপস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশকে পাঁচটি প্রকল্পে ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো এক দিনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এত বড় অঙ্কের ঋণচুক্তি সই হয়নি। বিশ্বব্যাংকপ্রধান ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে ঋণচুক্তির ঘটনাও আগে কখনো দেখা যায়নি।

‘বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বড় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়াকে খুবই তাৎপর্য’ উল্লেখ করে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান এবং বড় অঙ্কের ঋণচুক্তির মধ্য দিয়ে এক দশক আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল, তার একটা সম্মানজনক পরিসমাপ্তি হলো। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতুর ছবি উপহারও বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে।’

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। পদ্মা সেতুই হতে পারত কোনো একক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে- এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি। সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার আদালত- কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।

প্রায় ১০ বছর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। গত বছরের জুনে চালু হয়েছে সেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, তেমনি পুরোপুরি নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

তবে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ না নিলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের তেমন অবনতি হয়নি। উন্নয়ন সংস্থাটি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি পদ্মা সেতুতে যে অর্থায়ন করার কথা ছিল, তার চেয়েও বেশি অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি।

চার দিনের সফরে ২৫ এপ্রিল জাপান যান প্রধানমন্ত্রী। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি জাপানে ছিলেন। ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাপান থেকে সরাসরি ওয়াশিংটন যান বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান
বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্নধর্মী। সংস্থাটির সদর দপ্তরে একটি দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আগে কখনোই হয়নি। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।

বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেও বাংলাদেশের এগিয়ে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্য থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে। রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার উদ্ভাবনী পদ্ধতির জন্য স্বাতন্ত্র্য।’

বাংলাদেশ নজিরবিহীন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আমরা স্বাগত জানাই। বেসরকারি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, করের ভিত্তি প্রসারিত, আর্থিক খাত শক্তিশালীকরণ এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংক তার সমর্থন অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ অনুষ্ঠানে ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশ এবং এর জনগণের জন্য বিশ্বব্যাংকের দৃঢ় সহায়তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস সোমবার বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উদযাপন করেন।

এই অংশীদারত্ব লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে এবং এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করেছে। আঞ্চলিক যোগাযোগ, বন্যা দুর্যোগ মোকাবিলা, সবুজ, অভিঘাত সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, পরিবেশ ব্যবস্থপনার উন্নয়ন ও মাইক্রো-এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে কম দূষণকারী এবং আরও জলবায়ু- সহনশীল হতে সাহায্য করতে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক মোট ২২৫ কোটি (২.২৫ বিলিয়ন) ডলার সহায়তা করেছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশ থেকে ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ করে। দেশটি এখন পৃথিবীর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর অন্যতম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারত্বের স্মৃতিচারণা করেন। এই অংশীদারত্ব লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের মধ্যে একটি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন অনেক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অঙ্কুরিত আকাঙ্ক্ষা ও আমাদের জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে, দৃঢ়সংকল্পের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জকেও অতিক্রম করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এই উন্নয়ন যাত্রা সহজ ছিল না। কিন্তু আমরা কখনো সাহস হারাইনি। বিগত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে পাশে থেকেছে, আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করেছে। ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ যাতে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে পারে, সেজন্য আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আশা করছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ ঋণ পরিশোধে কখনো খেলাপি হয়নি এবং ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।” তিনি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ডিজিটাল ও ভৌত অবকাঠামোতে বিশ্বব্যাংকসহ বৈশ্বিক উন্নয়ন সহযোগীদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুযোগ এবং খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতার ইঙ্গিত দেয় এবং বাংলাদেশ কখনোই তার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি বা তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদে’ পড়েনি।”

সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আরও অধিক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চাইছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের অংশীদারত্বের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই। বিশ্বব্যাংককে অবশ্যই দারিদ্র্যবিমোচন এবং উন্নয়ন অর্থায়নের মূল লক্ষ্যের বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংক সক্রিয়ভাবে আমাদের ডিজিটাল রূপান্তরে সম্পৃক্ত রয়েছে। আমাদের সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের জনগণের কাছে তার কথা রেখেছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হওয়ার জন্য আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।”

প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট একটি মাল্টিমিডিয়া ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। যা গত ৫ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প তুলে ধরে এবং ৫০ বছরের অংশীদারত্বের প্রতিফলন করার জন্য একটি সেমিনারে যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে মোট ২২৫ কোটি ডলারের ৫টি অর্থায়ন চুক্তিও স্বাক্ষর করে। আঞ্চলিক সংযোগের উন্নতি, স্থলভূমিতে বন্যা মোকাবিলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি জোরদার, সবুজ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু উন্নয়নের দিকে স্থানান্তর, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ও সবুজ বিনিয়োগ জোরদার এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে কম দূষণকারী ও অধিক জলবায়ু-সহিষ্ণু হওয়ার জন্য সহায়তা দিতে এই অর্থায়ন করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা এবং ডেভিড ম্যালপাস বাংলাদেশের গত ৫ দশকের উন্নয়নের ওপর একটি মাল্টিমিডিয়া আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব বিষয়ে এক সেমিনারে যোগ দেন।

১৯৭২ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য হয় এবং একই বছরের নভেম্বরে বিশ্বব্যাংক প্রথম প্রকল্প অনুমোদন করে, যার মাধ্যমে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি এবং শিল্প খাতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্মাণ ও বিদ্যুৎ খাতে সহায়তার জন্য ৫ কোটি ডলারের জরুরি পুনরুদ্ধার ঋণ দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ৪টি প্রকল্প পুনরায় চালু করে, যা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে অনুমোদিত হয়।

৫০ বছরে ৩৮ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কোটি (৩৮ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থ কাজে লেগেছে দারিদ্র্যবিমোচনে। রাস্তাঘাট, ভবনসহ বড় অবকাঠামো নির্মাণেও অর্থ দিয়েছে এই বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতে বিশ্বব্যাংক দশকের পর দশক অর্থ দিয়ে আসছে। বর্তমানে ৫৭টি চলমান প্রকল্পে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।

সত্তরের দশকে মূলত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন প্রকল্পেই বেশি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক। আশির দশকে কৃষি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে তারা। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে সংস্কারে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে দুটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প হয়। এ দুটি প্রকল্প হলো বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু (যমুনা সেতু) এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (দুই লেন) নির্মাণ। এ ছাড়া তাদের সহায়তায় ২৬টি জেলায় মোট ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পল্লি সড়ক নির্মাণ করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে তাদের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল। পদ্মা সেতুই হতে পারত কোনো একক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বড় অর্থায়ন। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে- এমন অভিযোগ এনে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি। সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কানাডার আদালত, কোথাও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।