পড়তে বসলেই একটু-আধটু ঘুম এসেছে, এ রকম বিরক্তিকর পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ভালো ঘুম পড়াশোনাকে গভীর স্মৃতিতে পরিণত করতে পারে, কিন্তু পড়াশোনার মাঝে ঘুম চলে এলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত তৈরি করে। বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে এই ঝামেলা দূর করা সম্ভব।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবারে শরীরে মেদ তৈরি হয়, ফলে পরোক্ষভাবে আমাদের করে তোলে অলস। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাসে নজর দেয়া উচিত। নিয়মিত ফলমূল, শাকসবজি এবং সুষম খাবার আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। সুষম খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস করা উচিত। এতে মস্তিষ্ক আর্দ্র থাকে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। একেক দিন একেক সময়ে না ঘুমিয়ে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিত। রাত জেগে না পড়ে সকালবেলায় পড়াশোনার অভ্যাস করুন। একটানা না পড়ে পড়ার ফাঁকে ব্রেক নিলে বাড়ে মনোযোগ। এ ছাড়া বাদাম, চকলেটজাতীয় খাবার প্রোটিন জোগান দেয়ার পাশাপাশি আপনার মনকে রাখবে সতেজ। পড়ার টেবিলে একটানা বসে না থেকে মাঝেমধ্যে একটু হাঁটাহাঁটি করলে ঘুম দূর হতে সাহায্য করবে।
কোনো কঠিন টপিক একটানা পড়লে স্বভাবতই বিরক্তিবোধ তৈরি হয়। তাই পড়তে বসে হঠাৎ ঘুম চলে আসলে টপিক পরিবর্তন করে পড়া শুরু করুন। অনেকেই বিছানায় পড়াশোনা করতে বসে যান, আবার শুয়েও পড়ার অভ্যাস আছে অনেকের। খুব বেশি আরাম করে পড়তে বসলে ঘুম আসাটাও স্বাভাবিক। মনে রাখা উচিত, বিছানা হচ্ছে ঘুমের জায়গা, আর পড়ার জায়গা টেবিল। আপনি ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে পড়তে বসলে, ঘুমই আসবে।
কোনো টপিক পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখার অভ্যাসও ঘুম থেকে দূরে রাখবে আপনাকে। এটি আপনার শরীরকে ব্যস্ত রাখবে ফলে সহজে ঘুম আসবে না। পড়ার ফাঁকে চা-কফি খেলেও ঘুম দূর হয়। ক্যাফিনেটেড পানি এনার্জির জোগান দিয়ে শরীরকে সতেজ করে তোলে, ফলে তৈরি হয় পড়াশোনায় মনোযোগ। পড়ার ফাঁকে ঘুম দূর করতে সংগীত বেশ কার্যকরী। তাই মাঝেমধ্যে ব্রেক নিয়ে আপনার পছন্দের গানটি শুনুন। এতে মন ভালো হবে এবং মনোযোগ আসবে পড়াশোনায়।
ছাত্রজীবনে একাডেমিক পড়াশোনাতে ঘুম কিংবা ক্লান্তি এলেও গল্প-উপন্যাস পড়তে গেলে আর ঘুম আসে না। আমি নিজেও রাত জেগে একটানা পড়াশোনা করতে পারতাম না। আবার গল্প উপন্যাস পড়তে বসলে রাত পার হয়ে যেত। তাই একাডেমিক পড়ার ফাঁকে একটু-আধটু আউট বুক পড়ার অভ্যাস আপনাকে ঘুম থেকে দূরে রাখবে।
পড়ার রুমে পর্যাপ্ত আলো থাকাটা বাধ্যতামূলক। কম আলোয় আমরা ঘুমাতে স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই পড়ার রুমে কম আলো থাকলে আপনার মস্তিষ্ক সেটাকে ঘুমের পরিবেশ বলে ধরে নেয়। অপরদিকে ভালো আলো বাতাস থাকলে আপনার ক্লান্তি বোধ দূর হয়ে মনোযোগ বাড়বে পড়াশোনায়।
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এতে দেহের অক্সিজেন সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায়, ক্লান্তি দূর করে, শরীরকে রাখে ফিট। ইদানীং অনেকেই ইয়োগা আর মেডিটেশনের দিকে ঝুঁকছেন। মানসিক চাপ দূর করতে মেডিটেশন খুবই কার্যকরী। পড়াশোনার জন্য একটা সুন্দর মানসিক অবস্থার প্রয়োজন। মন ভালো না থাকলে এমনিতেই মনোযোগ তৈরি হয় না।
পড়ার সময় খুব বেশি ঘুম পেলে অ্যালার্ম দিয়ে ২০ মিনিট ঘুমিয়ে নিতে পারেন। আমিও নিজেও এই কাজটি করেছি, এটি খুবই কার্যকরী। কিছুক্ষণ রেস্ট নিলে ঘুম দূর হয়, পরবর্তী সময়ে তেমন ক্লান্তি বোধ তৈরি হয় না।
পড়াশোনার ফাঁকে ঘুম দূর করতে আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করুন। এতে বিরক্তি এবং ক্লান্তি দূর হয়ে মন থাকবে সতেজ।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা