রংপুরে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম সুমন অভিযোগ অস্বীকার করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
সদর উপজেলার সদ্যপুস্কুরিণী ইউনিয়ন পরিষদে রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এর পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার ও পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীন আলমসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। রোববার দিবাগত মধ্যরাতেরও পর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা।
ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, ‘৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন একজন মাদকসেবী। তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন। ওই সময় তিনি মাটি কাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে নানাভাবে টাকা নিয়েছেন অভিযোগ পেয়ে বিধি অনুযায়ী তাকে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মহিলা ইউপি সদস্যা আরেফা বেগম পাখিকে সভাপতি করা হয়। এতে সুমন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় সুমন গতকাল (রোববার) দুপুর দেড়টার দিকে আমার কার্যালয়ে আসেন। সেখানে আরও তিন-চারজন ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমার কক্ষে ঢুকেই উত্তেজিত হয়ে জানতে চান, প্রকল্পের সভাপতি কাকে করা হয়েছে। তাকে ভদ্রভাবে ধীরে কথা বলতে বললে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ার তুলে আমার কার্যালয়ের টেবিল এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেন। আমরা সদস্য হতভম্ব হয়ে পড়ি।’
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি প্রকল্পে সুমনকে সভাপতি হিসেবে বাদ দেয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানকে চেয়ার তুলে আঘাতের চেষ্টা করেন। এসময় তিনি চেয়ারম্যানের চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করেন। চেয়ারম্যান ভয়ে টেবিলের এক পাশে গিয়ে আশ্রয় নেন।’
তবে ইউপি সদস্য সুমন বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেছেন কি না, তা খেয়াল করেননি বলে জানান আলমগীর হোসেন। একই কথা বলেন প্রত্যক্ষদর্শী আরও দুই ইউপি সদস্য ছাইফুল মিয়া ও আরেফা বেগম পাখিও।
এদিকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে সুমনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি। এ বিষয়ে যদি পরিষদ থেকে মামলা করা না হলে আমরা দলের পক্ষ থেকে মামলা করব।’
এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সুমন। তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে দুপুরে চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। আমি তার কার্যালয়ে হামলা চালাইনি। আমি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে খুব ভালোবাসি। তাদের ছবি আমি ভাঙচুর করিনি। ইউপি চেয়ারম্যান নিজে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করে দোষ আমার ওপর চাপাচ্ছেন।’
জানতে চাইলে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘ওই ঘটনায় থানায় গভীর রাতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা। মামলার আসামি শহিদুল ইসলাম সুমনকে গ্রেপ্তার করে যত দ্রুতসম্ভব আইনের আওতায় আনা হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা