আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার হওয়ার পরদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। জানিয়েছেন নানা আক্ষেপের কথা। একইসঙ্গে অভিযোগ করে বলেছেন, সত্যটা তাকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি।
জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস আমি চোখের পানি ফেলেছি। এখন আর চোখের পানি ফেলব না। ১৮ মাস আমি বিভিন্ন জনের ঘরের দরজায় ঘুরেছি। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় প্রত্যেক নেতার অফিসে অফিসে, ঘরের দরজায় গিয়েছি। কেউ আমাকে সুযোগ দেয়নি। আমার সত্য তথ্যটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা মালেকের বাড়ি এলাকায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, তার বিরুদ্ধে যে ‘অবিচার’ হয়েছে, তার বিপরীতে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের একজন সমর্থক। সমর্থককে বহিষ্কার করতে আপনাদের কেন্দ্রীয় কমিটি কেন লাগবে? আমি আবেদন করব, আমাকে দলের সমর্থক হিসেবে থাকার জন্য জায়গা করে দেন। ক্ষমতা ও পদের জন্য না, আমার বিরুদ্ধে যে অবিচার করা হয়েছে, সেই সত্যটা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমার মায়ের সঙ্গে রয়েছি। গাজীপুরের লাখ লাখ মানুষ ঐক্যবদ্ধ। আমার কোনো পদ নেই, তারপরও লাখ লাখ মানুষ আমার সঙ্গে আছে।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকা অবস্থায় জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর। এর জের ধরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি, হারান মেয়র পদও। পরে ক্ষমা চেয়ে দলের সদস্যপদ ফেরত পান। তবে ফের গাজীপুর সিটির নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় ফের বহিষ্কৃত হতে হয়েছে তাকে।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে আজমত উল্লা খানকে। তবে এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম নেন জাহাঙ্গীর ও তার মা জায়েদা খাতুন। খেলাপি ঋণ থাকায় বাছাইয়ে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে জায়েদা খাতুন এখনো প্রার্থী আছেন এবং জাহাঙ্গীর তার পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতেই সোমবার তাকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
এর পরদিন নিজ বাড়িতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আপনারা দাওয়াত খেয়ে যান। কিন্তু গাজীপুরের মানুষকে থ্রেট (হুমকি) দিয়েন না। আপানারা নেতা, আমরা কর্মী। কোনো সংস্থা দিয়ে, কোনো পেশী শক্তি দিয়ে আপনারা কর্মীর বাসায় রাতদিন যাচ্ছেন, থ্রেট দিচ্ছেন, মোবাইলে কল করছেন। এটাকে ভোটের পরিবেশ বলে না।’
নিজের মাকে সংগ্রামী নারী উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, আমার মা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। জন্মের পর থেকেই আমাকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করার জন্য যে শিক্ষা দিয়েছেন, তা নিয়ে আমি গাজীপুরে আওয়ামী লীগের পরিবারে থেকে কাজ করেছি। ছাত্রজীবন থেকে সংগঠনের আদর্শ ও নিয়ম-নীতির বাইরে কখনো চলিনি। ছয় বছর গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাকে ২০১৮ সালে নৌকা দিয়েছে। সেই নৌকা নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছি।’
‘তিন বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের পরও গাজীপুরের কোনো মানুষ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। শুধু একজন করেছে। সব নেতারা বলেছেন, তুমি কোনো অন্যায় করোনি। আমরা বলব, সমাধান হয়ে যাবে। দুঃখের বিষয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ সঠিক খবরটি পৌঁছায়নি। মেয়র থাকা অবস্থায় আমি যেসব কাজ করেছি, সব সরকারি নিয়ম মেনেই করেছি। তারপরও আমার মেয়র পদ বাতিল বা স্থগিত হয়ে গেল। আমাকে আওয়ামী লীগ ও মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক কেউ আমার কথা দুই মিনিট শোনেননি বা তাদের কাছে আমাকে পৌঁছানোর কোনো পথও রাখা হয়নি,’— আক্ষেপ নিয়ে বলেন জাহাঙ্গীর।
এখনো দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ‘সত্য’ জানানোর আহ্বান জানিয়ে গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র আরও বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। আমি বলব, প্রধানমন্ত্রীকে সত্যটা জানান। তিনি সত্যটা জানুক। উনার নেতা-কর্মীদের এখানে হয়রানি করা হচ্ছে, অবিচার করা হচ্ছে। আমার মা আমাকে বলেছেন, তোমার ওপরে অবিচার করা হয়েছে। গাজীপুরে ১২ লাখ ভোটার ও ৪০ লাখ মানুষের ওপর অবিচার করা হয়েছে।’
সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী আজমত উল্লার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিরোধ অনেক পুরোনো। আজমত উল্লা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দল আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে। কিন্তু সে (আজমত উল্লা) আমার ক্ষতি করার জন্য জড়িত ছিল। আজ সব পাওয়ার (ক্ষমতা) চলে গেছে, রাষ্ট্র থেকে পাওয়া (মেয়র হিসেবে) সব পাওয়ার চলে গেছে। দলের সবাই চলে গছে। এ অবস্থায় আমরা মা-সন্তান দাঁড়িয়েছি (নির্বাচনে)। আমাদের তো কিছুই নেই। তারপরও কেন আমাদের কর্মীর ওপর অত্যাচার করা হয়? এটা কার জন্য ভালো?’
গাজীপুর সিটিতে সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে। সেই ইভিএম নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ইভিএম ভালো না খারাপ, সেটা ২৫ মে (নির্বাচনের দিন) দেখতে পারবেন। তখন আপনারাই বলবেন ভালো না খারাপ।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা