আপডেট : ১৯ মে, ২০২৩ ১৬:১৫
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান
বাসস

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হজক্যাম্পে হজ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে রেখে একটি আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নত জাতি গঠনে অবদান রাখতে হজযাত্রী এবং আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের (হজযাত্রীদের) এবং আলেম-ওলামাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যেন আমাদের শিশুরা এটি থেকে দূরে থাকতে পারে এবং উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রস্তুত হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হজ অফিসে এবারের হজ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এটি সর্বদা মানুষের কল্যাণের ধর্ম যা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে।’

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস করে, এমন কিছু লোকের কারণে ইসলামকে নিন্দিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসলে যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করছে তারা সব ধর্মেই আছে।’

‘যদি কেউ মনে করে যে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবে, তা কখনোই হবে না। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা বলেননি এবং আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তা বলেননি। আমাদের ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং এই অল্প কিছু মানুষই ইসলামের নিন্দার কারণ হয়ে উঠছে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই জঘন্য কাজটি থেকে এই লোকদের থামাতে সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সবাইকে আমাদের শিশুদের সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আপনাদের (হজযাত্রীদের) কাছে আমার সবচেয়ে বড় দাবি হলো, আপনারা আমার বাংলাদেশের জনগণের জন্য দোয়া করবেন, যাতে তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’

তিনি হজযাত্রীদের বাংলাদেশ ও এর জনগণকে মানবসৃষ্ট বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ঘটে, কারণ এখানে অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং পরিবহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার রাজধানীর আশকোনা এলাকায় হজক্যাম্পে হজ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ছবি: ফোকাস বাংলা

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বর্তমান অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্যও তিনি হজযাত্রীদের দোয়া করতে বলেন।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেনন, তার সরকার দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজ বাংলাদেশকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে যেখানে দেশের মানুষ অন্তত খাবার খেতে পারছে।

দেশের একজন মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছি।’

হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ চালু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন হজের যাবতীয় কার্যক্রম যেমন প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ফেরত, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্প ডেস্ক, কল সেন্টার, এজেন্সি প্রোফাইল ম্যানেজমেন্ট এসব ই-হজ ব্যবস্থাপনার অধীনে করা হচ্ছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখান থেকে ১৬১৩৬ নম্বরে কল সেন্টারের পাশাপাশি প্রতিটি হজযাত্রীকে এসএমএসের মাধ্যমে হজ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে এবং হজযাত্রীরা ডায়ালিং কলের মাধ্যমে সবকিছু জানতে পারবেন। সরকার হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ প্রণয়ন করেছে, যা হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ করেছে।’

প্রথম হজ ফ্লাইটটি শনিবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন পবিত্র হজ পালন করতে যাচ্ছেন। কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৫৮৫। কোভিডের আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করেছিলেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসেফ ইসা আল দুলাইহান এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হজ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।