আপডেট : ২০ মে, ২০২৩ ২২:২৯
দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ

ছবি: দৈনিক বাংলা

বিএনপির সমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের পাল্টা শান্তি সমাবেশ ঘিরে শনিবার দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে।

রাজবাড়ী

রাজবাড়ীতে বিএনপির সমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী যুবলীগ-বিএনপি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটা ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে।

গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের আদর্শ মহিলা কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে পূর্বনির্ধা‌রিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজবাড়ী পৌর শহ‌রের সজ্জনকান্দা এলাকার বিএনপির সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের বাড়িতে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বের হলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় দ‌লের ম‌ধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন আহত হন।

সংবাদ সংগ্রহের সময় এখন টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কাজী তানভীর মাহমুদ ও গ্লোবাল টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি খন্দকার রবিউল ইসলাম আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে।

পরে নিজ বাসভবনে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় রাজবাড়ী যুবলীগের সভাপতি শওকত হাসানের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে আমাদের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। পরবর্তী সময়ে আমরা মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, বিএনপির সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

পটুয়াখালী

পূর্বনির্ধা‌রিত কর্মসূচীর অংশ হিসা‌বে শ‌নিবার সকাল ১০টায় পটুয়াখালী শহ‌রের বনানী এলাকায় দলীয় কার্যাল‌য়ে বিএন‌পির জনসমা‌বেশ অনু‌ষ্ঠিত হয়। কে‌ন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বক্তব‌্য চলাকা‌লে বেলা ১১টার দি‌কে জেলা ছাত্রলী‌গের কর্মীরা বিএন‌পির সমা‌বে‌শে হামলা চালায়। এরপর বিএনপি নেতা-কর্মীরাও পাল্টা আক্রমণ করেন। প্রায় আধা ঘণ্টা উভয় প‌ক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে প‌রি‌স্থি‌তি নিয়ন্ত্রণে আন‌তে পু‌লিশ ক‌য়েক রাউন্ড কাঁদা‌নে গ‌্যাস নি‌ক্ষেপ ক‌রে। এ ঘটনায় উভয় দ‌লের অন্তত ১৫ জন আহত হন।

জেলা বিএন‌পির সদস‌্যস‌চিব স্নেহাংশু সরকার কু‌ট্টির অভিযোগ, শা‌ন্তিপূর্ণ প‌রি‌বে‌শের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ প‌রিক‌ল্পিতভা‌বে হামলা চা‌লি‌য়ে তাদের ১০‌ থে‌কে ২০ জন কর্মী‌কে আহত ক‌রে‌ছে।

অপর‌ দি‌কে জেলা ছাত্রলী‌গের সে‌ক্রেটারি তানভির হাসান আরিফ ব‌লেন, ‘সন্ত্রাস নৈরা‌জ্যের প্রতিবা‌দে আমরা মি‌ছিল কর‌লে বিএন‌পির গুন্ডারা আমা‌দের ওপর হামলা চালায়, এতে আমা‌দের ক‌য়েকজন আহত হ‌য়ে‌ছেন।’

পটুয়াখালী‌তে সংঘ‌র্ষের পর কে‌ন্দ্রীয় বিএন‌পি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু এক সংবাদ স‌ম্মেল‌নে ব‌লেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ, নির‌পেক্ষ ও গ্রহণ‌যোগ‌্য কোনো নির্বাচন হ‌বে না। এ সময় কে‌ন্দ্রীয় বিএন‌পির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হো‌সেন, জেলা বিএন‌পির সদস‌্যস‌চিব স্নেহাংশু সরকার কু‌ট্টিসহ অঙ্গসংগঠ‌নের নেতা-কর্মীরা উপ‌স্থিত ছি‌লেন। দুপুর সা‌ড়ে ১২টার দি‌কে হো‌টেল হিলট‌নের তৃতীয় তলায় এ সংবাদ স‌ম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত হয়।

নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় গতকাল বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া ও হামলায়। এতে বিএনপির অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৫ জনকে ময়মনসিংহে পাঠানো হয়েছে।

দলীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত সমাবেশ কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা এড়াতে সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জেলা শহরের মুক্তারপাড়া, ছোটবাজার, কুড়পাড়, মুক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন এলাকা, মদন-কেন্দুয়া বাসস্ট্যান্ড, নতুন জেলখানা সড়কে অবস্থান নিয়ে মহড়া দেয় সরকারদলীয় লোকজন। দুপুর ১২টার দিকে শহরের কুড়পাড় এলাকায় বিএনপি সমাবেশ করতে চাইলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে যুবলীগের নেতারা। এ সময় বিএনপির কয়েকজন আহত হন। পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে শহরের নতুন জেলখানা সড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হলে সেখানেও ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় সরকারদলীয় লোকজন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান লিটন বলেন, ‘জেলা শহরের কোথাও বিএনপি কোনো সমাবেশ করেনি। মদনপুর সমাবেশ করতে চেয়েছিল। শুনেছি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তা হয়নি। তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা গৌরিপুর পর্যন্ত এসেছিল, তারা নেত্রকোনায় ঢোকেনি।’

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় চলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ ভয়ে বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ধাওয়া করে।’