আপডেট : ২২ মে, ২০২৩ ১০:৪৪
কুমিল্লায় প্রজনন মৌসুমে নেই বৃষ্টি, বিলুপ্তির শঙ্কায় দেশীয় মাছ
প্রতিনিধি, কুমিল্লা

কুমিল্লায় প্রজনন মৌসুমে নেই বৃষ্টি, বিলুপ্তির শঙ্কায় দেশীয় মাছ

পানির অভাবে শুকিয়ে যাওয়া জলাধার থেকে মাছ ধরেন স্থানীয়রা। সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হায়দারাবাদ গ্রামে। ছবি : দৈনিক বাংলা

বৈশাখ শেষে জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হলেও কুমিল্লায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। গত কয়েক দশকের মধ্যে জেলায় এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়। বৃষ্টির অভাবে এখানকার খাল-বিল, নদী-নালা ও অন্য জলাশয়গুলো এখন পানিশূন্য। দেশীয় বহু প্রজাতির মাছের এখন প্রজননের সময়। কিন্তু এ সময় পানির অভাবে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। আবার অনেক প্রজাতি ডিম ছাড়লেও পানি স্বল্পতায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড গরমে জনজীবনের পাশাপাশি বিপর্যস্ত মৎস্যকুলও। এই সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। কারণ, এখন তাদের প্রজননের মৌসুম। এরই মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ বিপন্ন হয়ে গেছে। কুমিল্লার জলাশয়গুলো আরও কিছুদিন এভাবে পানিশূন্য থাকলে অচিরেই আরও বহু দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলেরা জানান, কুমিল্লায় এই মুহূর্তে বিলুপ্তির পথে রয়েছে চাপিলা, বইচা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি, শিং, কৈ, টাকি, তেলা টাকি, মলা-ঢেলা ও দারকিনাসহ অন্তত ৩৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ। জেলার চান্দিনা, দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, দাউদকান্দি, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দেশীয় মাছ বিচরণের স্থান রয়েছে। তবে এসব এলাকার অধিকাংশ জলাধার এখন পানিশূন্য। তীব্র তাপে খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। এখানকার মেঘনা, তিতাস, গোমতী, কালাডুমুর, ডাকাতিয়া ও ঘুঙুর নদীতে এখন পানি নেই বললেই চলে।

বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বছর দশেক আগেও বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে আমরা রাজাপুর জলায় পুঁটি, টাকি, বাইম, বুতুম, শোল, বোয়াল, কালিবাউশ মাছ ধরতাম। সবচেয়ে বেশি ছিল টেংরা, কই ও পুঁটি। এখন পানি হয় না। মাছও ধরতে পারি না।’

বুড়িচং উপজেলার পয়াত গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী হামিদ মিয়া বলেন, ‘পয়াতের জলার ইছা (ছোট চিংড়ি) মাছের একটা জাত ছিল। আস্তা বা চাঁই দিয়া ইছা মাছ ধইরা বাজারে নিতাম। আইজ কত বছর ইছা মাছ দেহি না। বৈশাখ মাসে আমরা আন্তা লইয়া চলাত পইরা থাকতাম। এহন পানি নাই, মাছও নাই।’

পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত বলেন, পানির অভাব, ‘কীটনাশকের প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে জলাশয়ে বাঁধ দেয়াসহ নানা কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে। আমরা শৈশব-কৈশোরে যেসব মাছ দেখেছি, এখন সেগুলো নেই। যেই পরিমাণে দেশীয় মাছ দেখেছি, বর্তমানে তা অপ্রতুল। দেশীয় মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তাই এ মাছ রক্ষায় সরকারের পরিকল্পনা করা এখন সময়ের দাবি।’

এ নিয়ে কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রবিউল আলম পারভেজ বলেন, ‘শুধু যে অপ্রতুল বৃষ্টির কারণে দেশীয় মাছ বিপন্ন বা বিলুপ্ত হচ্ছে, বিষয়টি তা নয়। আরও বহু কারণ রয়েছে। তবে আমরা কৃত্রিম পদ্ধতিতে অনেক দেশি মাছ ফিরিয়ে এনেছি। সেসব মাছ এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমাদের চারপাশের জলাশয়ে দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য পানির গভীরতা বাড়িয়ে সেগুলো সংস্কার করতে হবে। নদীদূষণ ও কলকারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা যাবে না। মাছের আবাসস্থল সংরক্ষণ করতে হবে। মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে হবে। নির্ধারিত সময়ে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ ধরা নিষেধ করতে হবে। তাহলেই আগের মতো দেশীয় মাছের বিচরণ ঘটবে।’