নানামুখী তৎপরতার পরও সিলেটের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারেনি বিএনপি। দলটির বেশ কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপিদলীয় বর্তমান সাত কাউন্সিলরের ছয়জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
শুরু থেকেই এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির সিটি মেয়র, এমনকি কাউন্সিলর পদেও দলীয় নেতাদের অংশ না নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সিলেটে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। যদিও ২০ মে সমাবেশ করে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন আরিফুল হক। এর আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান নগরের ৪নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তবে লোদী ছাড়া বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের কেউই নির্বাচন থেকে সরে আসেননি।
গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন।
এর আগে সোমবার মনোনয়ন জমা দেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। এ ছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ এবার ২৫নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলের আপত্তির পরও মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, ‘বিএনপির সব কাউন্সিলরই এবার প্রার্থী হয়েছেন। একমাত্র কয়েস লোদী ছাড়া কেউই নির্বাচন বর্জন করেননি। তাই আমিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। বাকি নেতারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন, তবে আমিও প্রত্যাহার করব।’
বর্তমান ছয় কাউন্সিলর ছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার যাতে বিএনপির কেউ প্রার্থী না হন, এ ব্যাপারে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে দলটি। মেয়র আরিফুল হককে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালায় দলটি। সিলেটে বিএনপিদলীয় ২৫ সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ৩২ সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় মহানগর বিএনপি।
এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গ দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এসব প্রচেষ্টাও নেতাদের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি।
তবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া নেতারাও ভুল বুঝতে পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন- এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। অনেকে না বুঝে সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তারপরও আমরা আশা করব, তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে এই পাতানো নির্বাচন বর্জন করবেন। অন্যথায় দলের তরফ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মেয়র পদে ১১ প্রার্থী
সিলেট নির্বাচনে গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের সময়সীমা শেষ হয়েছে। শেষ দিন পর্যন্ত সিলেটে মেয়র পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদির।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আর ২১ জুন ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা