আপডেট : ২৪ মে, ২০২৩ ১২:৩০
সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমল ৩০০ টাকা
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট

সপ্তাহের ব্যবধানে ধানের দাম কমল ৩০০ টাকা

রাস্তার দুই পাশে ভ্যানে করে ধান নিয়ে বিক্রির জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষকরা। গতকাল সকালে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে। ছবি: দৈনিক বাংলা

কৃষকের ঘরে যখন ধান-আলু থাকে, তখন ফসলের দাম কমে। আর কৃষকের ঘরে ধান-আলু না থাকলেই দাম বেড়ে যায়। ৪৩ মণ কাটারি ধান বিক্রি করতে এনেছি। কেনার কেউ নেই। বাধ্য হয়ে বাজার ঘুরে ধান বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।

দাম কম হওয়ায় ধান বিক্রি করতে না পেরে আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাদাউচ্চ গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার সবচেয়ে বড় ধানের বাজার কালাই পৌর উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন তিনি।

বাজারে ধান বিক্রি করতে যাওয়া কৃষকরা জানালেন, জয়পুরহাটে সপ্তাহের ব্যবধানে বোরো ধানের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে গেছে। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাজারে নিত্যপণ্যের দামও বাড়তি। এখন আচমকা ধানের দাম কমে যাওয়ায় তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মৌসুমের ধান-চাল মজুত এখনো রয়ে গেছে। তা ছাড়া মিলাররা এখনো ব্যাপক হারে ধান কেনা শুরু করেননি। এ কারণেই ধানের বাজার নিম্নমুখী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় এবার ৬৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত জেলার ৩৮ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক কৃষক ধান কাটা ও মাড়াই শেষে বিক্রির জন্য বাজারে নিতে শুরু করেছেন।

জয়পুরহাটের কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা বাজারে জেলার সবচেয়ে বড় ধানের হাট বসে। মৌসুমে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর থাকে বাজারের চারপাশ। এ সময় রাস্তার দুই পাশে দিয়ে ধানবোঝাই ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান ও শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ভটভটির সারি নিয়ে বিক্রেতাদের অপেক্ষায় থাকেন কৃষকরা। পাশের বগুড়া জেলার কৃষকরাও ধান বিক্রি করতে আসেন এই বাজারে।

সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চলতি সপ্তাহে কাটারি ও জিরাশাইল ধান প্রতি মণ ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা ও মোটা আতপ ৯০০ থেকে ১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত সপ্তাহে প্রতি মণ কাটারি ধান ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা, জিরাশাইল ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা ও মোটা আতপ ১২৫০ থেকে ১৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

ধান নিয়ে পাঁচশিরা হাটে ধান বিক্রি করতে গিয়েছিলেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ভায়ের পুকুর এলাকার কৃষক আলমাস হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে এই বাজারে কাটারি ধান বিক্রি করেছিলাম ১৪০০ টাকায়। আজকে (গতকাল) ৪৯ মণ কাটারি ধান নিয়ে এসেছি, দাম পেয়েছি ১১০০ টাকা করে। ধানের দাম এত কম! এ রকম হলে এবারও বেশ লোকসানের মুখেই পড়তে হবে।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমী এলাকার কৃষক ফরিদ মণ্ডল বলেন, ‘সপ্তাহে ধানের দাম প্রতি মণ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কমেছে। আমার প্রতি বিঘায় ধান হয়েছে ২২ থেকে ২৬ মণ। উৎপাদন খরচ ছিল ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। একদিকে ধানের আমদানি বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করছেন। সামনে আবহাওয়া অনূকূলে না থাকলে আরও লোকসানে পড়তে হবে। কিনতে গেলে সবকিছুরই দাম বেশি। আর আমরা কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গেলেই দাম কম।’

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকী সিঅ্যান্ডবি চারমাথার ধান ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান রাশেদ বলেন, অনেক মিলারের কাছেই আগের মৌসুমের ধান আছে। তাই তারা ধান কিনছেন না। এ কারণেই বাজারে ধানের দাম পড়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখন পর্যন্ত বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। এখন ধানের দাম একটু কমলেও সামনে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন।

জয়পুরহাট কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, ধানের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও আছে। তবে আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।