২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে এ বিকল্প প্রস্তাব দেন সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। সূচনা বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুল ইসলাম।
তাদের এই বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরের সরকারের বাজেটের চেয়ে তিন গুণ। একই সঙ্গে আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন, তার তুলনায় ২ দশমিক ৭ গুণ। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির বিকল্প বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪ দশমিক ৪২ গুণ বেশি। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯৩ দশমিক ২ শতাংশের জোগান দেয় রাজস্ব। বাকি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি হবে ঘাটতি বাজেট। বিকল্প বাজেটে কালোটাকা ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আগামী ১০ বছরে ছয়টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই বিকল্প বাজেটের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে জানান সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। সেগুলো হচ্ছে ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনিক শ্রেণির সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি ও মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
আবুল বারকাত আরও বলেন, এখন মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ মূল্যস্ফীতি; মানুষ সঞ্চয় ভাঙছেন, ধারদেনা করে চলছেন। ভোগব্যয় কমিয়েছেন অনেকে, বিশেষ করে আমিষ খাওয়া বাদ দিয়েছেন অনেক মানুষ। ওষুধপত্র কেনার সামর্থ্যও হারাচ্ছেন অনেকে। তিনি আরও বলেন, নিম্ন-মধ্যবিত্তের অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। বেকারত্ব বাড়লে জিনিসপত্রের দাম কমলেও কিছু যায় আসে না।
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, সম্পদ করারোপ করে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব। বৈষম্য কমাতে হলে সম্পদ করারোপ করতে হবে। সম্পদশালীদের কর কমানো হলে বৈষম্য কমে না। এ ছাড়া সমাজের কম আয়ের ৯০ শতাংশ মানুষের কর কমানো হলে তাদের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির প্রসঙ্গে আবুল বারকাত বলেন, ‘আমেরিকার নতুন ভিসা নীতির কারণে কার সমস্যা হবে, বুঝতে পারছি না। তবে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষের সমস্যা হবে না। কারণ, তাদের আমেরিকার ভিসার দরকার নেই।’
আবুল বারকাত বলেন, ‘আমাদের ঘোষিত বাজেট সম্প্রসারণশীল বাজেট। এখানে ২৪টি মূল পয়েন্টের উপস্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য ও অসম দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তাবেষ্টনী, মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ ও সঞ্চয়, রেমিট্যান্স, পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বৈদেশিক খাত, সরকারি ঋণ, কৃষি ভূমি, ভূমি মামলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়, প্রতিবন্ধী মানুষ, প্রকৃতি ও সরকারি অর্থের সংস্থান প্রভৃতি।
বিকল্প বাজেট সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা এবং ৪৫টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট পেশ করেছিল বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। ওই বাজেটে মোট ৩৩৮টি সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১৮ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যেখানে প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি কালোটাকা উদ্ধার ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা বলা হয়।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা