মিথ্যা অভিযোগ তুলে বান্দরবানের লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের লুলাইং মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) সিংপাশ ম্রোকে হয়রানি করা হচ্ছে। পূর্বশত্রুতার জের ধরে একটি কুচক্রী মহল বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নামে-বেনামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এ হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেন হেডম্যান সিংপাশ ম্রো।
এদিকে হেডম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে হয়রানির প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন লুলাইং মৌজার ১১ পাড়ার কারবারি ও বিভিন্ন পাড়ার ১৪৭ বাসিন্দা।
জানা যায়, লুলাইং মৌজায় ১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়া রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে সিনওয়াই ম্রো নামে এক ব্যক্তি লুলাইং হেডম্যানপাড়ার কারবারি হিসেবে নিযুক্ত হন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০১০ সালের দিকে সপরিবারে পার্শ্ববর্তী কুইছড়াপাড়ায় চলে যান সিনওয়াই ম্রো। লুলাইং হেডম্যানপাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে সিনওয়াই ম্রোকে বিধি মোতাবেক কারবারি পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ অব্যাহতির পেছনে হেডম্যান সিংপাশ ম্রোর হাত আছে বলে সন্দেহ করতে থাকেন সিনওয়াই ম্রো। এরই জের ধরে সিংপাশের সঙ্গে সিনওয়াইয়ের মনোমালিন্য শুরু হয়।
এ ছাড়া হেডম্যান সিংপাশ ২০১৫ সাল থেকে লুলাইংমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ বিদ্যালয়ের জমিদাতা হলেন হেডম্যান সিংপাশ ম্রোর চাচা পাইয়া ম্রো। এ দলিলের সাক্ষী হলেন কারবারি সিনওয়াই। লোভের বশীভূত হয়ে দান করা জায়গা আবার দখলের চেষ্টা করেন পাইয়া ও সালাওয়াদিন।
এমনকি সিনওয়াই ও পাইয়া বিদ্যালয়ের বারান্দায় সবজি চাষাবাদ, তামাক চুল্লি স্থাপন করার পাশাপাশি গরু-ছাগল বেঁধে রেখে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছেন। এসব কাজের প্রতিবাদ করলে পাইয়া ও সিনওয়াই হেডম্যান সিংপাশের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হন। একপর্যায়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে গত ৫ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু জনসাধারণকে কুপ্ররোচনা দিয়ে ক্ষিপ্ত করে সিংপাশকে হেডম্যান পদ থেকে অপসারণের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ৪২ জন স্থানীয় বাসিন্দার স্বাক্ষর থাকলেও এর মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষর জাল বলে জানা গেছে। স্বাক্ষরকারী ওই ১৫ ব্যক্তি অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না। এ ছাড়া সর্বশেষ অভিযোগকারী মেনসিং ম্রো লুলাইং মৌজার বাসিন্দাও নন।
এদিকে বিদ্যালয়ের জায়গা দখলে নিতে না পেরে দান করা জায়গা নিজেদের দাবি করে আমমোক্তারনামামূলে মো. আবু ছিদ্দিক নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বান্দরবান জেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলাও করা হয় (মামলা নম্বর ১৫২/২১)। পরে বিদ্যালয়ের জায়গা রক্ষা করতে সাংবাদিক সম্মেলন করায় বিভিন্ন হুমকিধমকির শিকার হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেন হেডম্যান সিংপাশ ম্রো।
অন্যদিকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করা অভিযোগটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও গত ১৩ এপ্রিল উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে অভিযোগের শুনানি করেন।
এতে সিনওয়াই ম্রোরা উত্থাপিত অভিযোগের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ইউএনও মোস্তফা জাবেদ কায়সার।
লুলাই মৌজা হেডম্যান সিংপাশ বলেন, ‘মূলত কারবারি পদ থেকে অপসারণ ও বিদ্যালয়ের জায়গা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করেই আমাকে ভুল বুঝে সিনওয়াই ও পাইয়া প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রানি করছেন।’
তবে হেডম্যান সিংপাশ ম্রোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য বলে দাবি করেন সিনওয়াই ম্রো। এ বিষয়ে ইউএনও মোস্তাফা জাবেদ কায়সার বলেন, লুলাইং মৌজা হেডম্যান সিংপাশ ম্রোর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা