কক্সবাজার টেকনাফে অপহরণের শিকার হওয়ার ২৫ দিন পর তিন বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তিন বন্ধুর পরিবারের অভিযোগ, তারা অপহরণের অভিযোগ জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করেছে। পুলিশ সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো।
এদিকে তিন বন্ধুকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় দুই রোহিঙ্গা নারীর জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। মিনা ও কোহিনুর আক্তার নামে ওই দুই নারীকে খুঁজছে পুলিশ। এর মধ্যে কোহিনুরকে পাত্রী হিসেবে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল ওই তিন বন্ধুর।
কক্সবাজারের টেকনাফে বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউসুফ, চৌফলদণ্ডী এলাকার রুবেল ও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান। গত বুধবার তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়।
পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক রোহিঙ্গা নারীর আমন্ত্রণে গিয়ে গত ২৮ এপ্রিল অস্ত্রের মুখে অপহরণের শিকার হন তারা। পরদিন রুবেলের মোবাইল ফোন থেকে অপহরণকারীরা তিনজনকে নির্যাতন করার ভিডিও পাঠিয়ে তাদের পরিবারের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
ইউসুফের ভাই মো. ইউনুছ বলেন, ‘২৮ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয় ইউসুফ। তিন দিন পর আমার মোবাইলে একটা কল আসে, ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। সর্বশেষ গত ১৫ মে ফোন করে বলে, পাঁচ লাখ টাকা না দিলে আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।’
নিহত তিনজনের পরিবারের সদস্যদেরই অভিযোগ, ২৯ এপ্রিল তারা জিডি করতে গেলে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ কোনো থানা জিডি নেয়নি। পুলিশ যথাসময়ে জিডি নিলে তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন তারা।
ইমরানের বাবা মুহাম্মদ ইব্রাহিম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ইমরানের সন্ধান চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ দুই থানার ওসি ও অফিসাররা আমাদের গুরুত্ব দেননি। নির্যাতনের ফুটেজ দেখিয়ে জিডি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। দুই থানায় ঘুরতে ঘুরতে পাঁচ দিন চলে গেছে। তারা দ্রুত জিডি নিয়ে অভিযান চালালে হয়তো ছেলেকে ফিরে পেতাম।’
ইমরানের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘২৯ এপ্রিল অপহরণকারীরা ইমরানের মোবাইল ফোন থেকে কল করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আমরা ধার করে ইমরান ও রুবেলের নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে এক লাখ এক হাজার টাকা দিয়েছিলাম। বাকি টাকা দিতে না পারায় তাদের খুন করেছে অপহরণকারীরা।’
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে হামিদা বেগম বলেন, ‘টেকনাফ থানায় আমার স্বামী অন্তত সাতবার গেছেন। কিন্তু পুলিশ জিডি বা মামলা নেয়নি। কক্সবাজার সদর থানাও জিডি বা মামলা রেকর্ড করেনি। এটাই কষ্ট আমাদের।’
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ওই তিনজন এখান থেকে নিখোঁজ হননি। তারা যেখান থেকে নিখোঁজ হয়েছেন, সেই থানায় আমরা যেতে বলেছিলাম স্বজনদের। সর্বশেষ আমার থানায় জিডি হয়েছে। কাউকে হয়রানি করা হয়নি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, ‘তারা সদর থানায় জিডি করায় আমরা জিডি না নিয়ে স্বজনদের অভিযোগের পরপরই তাদের উদ্ধারে কাজ শুরু করি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই স্বজনদের অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।’
এদিকে তিন বন্ধুর অপহরণের পেছনে দুই রোহিঙ্গা নারীর জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। রুবেলের ভাগনি রুপা আক্তার বলেন, ‘রুবেল মামা বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছিলেন। এর মধ্যে কোহিনুর নামে এক রোহিঙ্গা নারীর ফাঁদে পড়েন তিনি। সেই কোহিনুর ও মিনা নামের দুই নারী কৌশলে মামা ও তার বন্ধুদের টেকনাফ নিয়ে অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেয়।’
পুলিশও কোহিনুরসহ তার সহযোগীদের খুঁজছে বলে জানিয়েছে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা