আপডেট : ৩১ মে, ২০২৩ ১১:১১
কেঁচো সারে লাভবান নারীরা
মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী

কেঁচো সারে লাভবান নারীরা

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের স্বরূপার চক গ্রামের নারীরা বাড়িতে গড়ে তুলেছেন কেঁচো সার তৈরির হাউস। ছবি: দৈনিক বাংলা

ক্ষতি বিবেচনায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোস্ট তথা কেঁচো সারের দিকে ঝুঁকছেন। আর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে এই কেঁচো সার উৎপাদন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অর্ধশতাধিক নারী। উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ সারের উৎপাদনে সুফল পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। দিন দিন এ সারের চাহিদা বাড়ছে।

সম্প্রতি গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপার চক গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী নিজেদের প্রচেষ্টায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির হাউস। কেঁচোর এই সার উৎপাদন ও বিপণন করে তাদের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। একসময়ের নিত্য অভাবকে জয় করে এখন তারা নিজেরাই স্বাবলম্বী।

উদ্যোক্তা জোসনা আক্তার বলেন, ‘অভাবের সংসার ছিল। তখন উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমার আশপাশের কয়েকজন নারীকে নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন করে প্রথমে তিনটি রিংয়ে থাই কেঁচো দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করি। সেই সার দিয়ে আশপাশের নারীদের নিয়ে পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ করি। সেই বিষমুক্ত সবজি নিজেদের চাহিদা পূরণের পর বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছি।’

জোসনা আক্তার বলেন, ‘প্রথমে কৃষি অফিসের সহায়তায় পাঁচটি রিংয়ে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করেছি। পরে সার বিক্রি করে আরও রিং বাড়িয়েছি। বর্তমানে আমার এখানে ২০টি রিং আছে। আমাদের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্টের সুনাম আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের চাহিদা পূরণ করে প্রতি মাসে এই কম্পোস্ট সার বিক্রি করে ৭-১০ টাকা হাজার পর্যন্ত আয় হচ্ছে।’

আরেক উদ্যোক্তা খোদেজা বেগম বলেন, ‘একসময় দুটি টাকার জন্য স্বামীর কাছে ধরনা দিতে হতো। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদান করে আমি এখন স্বাবলম্বী।’

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড জবানী রায়েরপাড়া এলাকার আরেক নারী উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার জানান, অনেক আগে থেকেই তার নিজে কিছু করার প্রয়াস ছিল। এ লক্ষ্যে তিনি বাড়িতে গরু-ছাগল পালনের চেষ্টা করেছিলেন। এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বাড়ির ছাদে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেন এবং লাভের মুখ দেখেন।

উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষি উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে খোদেজা বেগমের মতো ওই গ্রামের অর্ধশত নারী এখন স্বাবলম্বী। এ গ্রামের নারীদের উৎপাদিত ভার্মি কমপোস্ট সার বিক্রিতেও কোনো ঝামেলা পড়তে হয় না। কারণ, শুধু গোয়ালন্দ নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকেও লোকজন এসে তাদের উৎপাদিত সার বাড়ি থেকেই ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান।

কৃষি উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিউটি আক্তার বলেন, গ্রামের গৃহবধূদের সমিতির মাধ্যমে কেঁচো সার তৈরির ধারণা দেয় স্থানীয় কৃষি অফিস। তারাই প্রশিক্ষণ ও কেঁচো সরবরাহ করে। বর্তমানে সমিতির অন্তত ৫২ জন সদস্য নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। সবাই লাভবান হচ্ছেন।

ভার্মি কম্পোস্টের সুবিধা তুলে ধরে কৃষক মো. সাইদ বলেন, ‘আমি সবজি চাষে প্রথমে অল্প কিছু ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে সুফল পেয়েছি। পরে ছয় বিঘা জমিতে সবজি চাষে আমি অধিকাংশ সময় রাসায়নিক সার কম ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) বেশি ব্যবহার করেছি। এতে সবজিও ভালো ধরেছে, খেতেও অনেক সুস্বাদু।’

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকন উজ্জামান বলেন, ধান-গম-পাটসহ বিভিন্ন শাকসবজিতে এ সার ব্যবহারে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এর ব্যবহারে জমির উর্বরা শক্তি বাড়ে। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। গোয়ালন্দ উপজেলায় এই সার উৎপাদন করে ৫০ জনেরও বেশি নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উপজেলার এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে প্রায় ৪০ দিন সময় লাগে। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির নিরাপদ স্বাস্থ্যে ভীষণ জরুরি। কেঁচো কম্পোস্টে অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে প্রায় ৭ থেকে ১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকে। আমরা কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’