আপডেট : ২ জুন, ২০২৩ ২৩:৫৪
গুচ্ছের শেষ পরীক্ষা শনিবার, এক-তৃতীয়াংশ পরীক্ষার্থীই ঢাকায়
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

গুচ্ছের শেষ পরীক্ষা শনিবার, এক-তৃতীয়াংশ পরীক্ষার্থীই ঢাকায়

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ভিড়। ফাইল ছবি

বিজ্ঞান শাখার ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শনিবার শেষ হচ্ছে দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও বিবিএ প্রথম বর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি কেন্দ্র একযোগে এ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার কমিটি সূত্রে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও বিবিএ প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় মোট তিন লাখ তিন হাজার ২৩১টি আবেদন জমা হয়েছে। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করেছেন ৯৩ হাজার ৫২২ জন শিক্ষার্থী, যা মোট আবেদনকারীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য জানান, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখার ‘এ’ ইউনিটে এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৩৩টি, মানবিক শাখার ‘বি’ ইউনিটে ৯৬ হাজার ৪৩৪টি ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ‘সি’ ইউনিটে ৩৯ হাজার ৮৬৪টি আবেদন জমা পড়েছে।

ড. উজ্জ্বল বলেন, আবেদনকারীদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করেছেন ৯৩ হাজার ৫২২ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ৫৬ হাজার ৫৩৬ জন, ‘বি’ ইউনিটে ২১ হাজার ৬৫ জন ও ‘সি’ ইউনিটে ১৫ হাজার ৯২১ জন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১২ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর বাইরে এই কেন্দ্রের অধীনে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপকেন্দ্রে আসন বিন্যাস করা হয়। এবারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকেন্দ্রগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নটরডেম কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভ. কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স এবং সরকারি বাংলা কলেজ।

দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি লাঘবে ২০১৯ সালে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। মূলত একজন শিক্ষার্থীর কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি বিষয়ে ভর্তি হতে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে দেশময় ছোটাছুটি করে বেড়ানো এবং এ সময়ে পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের হয়রানি, অর্থ ও সময় ব্যয়ের সমাধানে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। ফলে সারা দেশে ১৯টিকেন্দ্র থাকার পরও পরীক্ষার্থীরা কেন ঢাকার একটি কেন্দ্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়মুখী হচ্ছেন, সে প্রশ্নও থেকেই যায়।

পরীক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা বলছেন, কোচিং বাণিজ্য, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঢাকার কলেজগুলোর মান ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত না হওয়াই ঢাকামুখী হওয়ার প্রধান কারণ। তবে এতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছে না, সেটিও মানতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।

ঝিনাইদহের রাবেয়া খাতুন অংশ নিচ্ছেন এবারের গুচ্ছ পরীক্ষায়। পাশের দুই জেলা যশোর ও কুষ্টিয়ায় কেন্দ্র থাকলেও তিনি পছন্দ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মাঝের সময়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পড়েছে। শিক্ষার্থীদের ভিড়ে জাহাঙ্গীরনগরের পরীক্ষার সময় যেতে অসুবিধা হতে পারে বিধায় গুচ্ছের কেন্দ্র ঢাকাতে দিয়েছি। আগেভাগে ঢাকা চলে এসেছি, যেন যাতায়াতে কোনো অসুবিধা না হয়।’

নীলফামারী থেকে ছোট ভাইকে নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছেন ফজলে রাব্বি। তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইকে ঢাকায় কোচিং করিয়েছি। এ ছাড়াও গুচ্ছের পর জাবির পরীক্ষা রয়েছে। এ কারণেই ঢাকাকে কেন্দ্র হিসেবে পছন্দ করেছি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা করে নিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোচিং-নির্ভরতা রয়েছে এখনো। তাদের বড় অংশই ভর্তি হয় ঢাকার বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে। ঢাকামুখী হওয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় প্রভাবক। এর বাইরেও যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ঢাকার আশপাশের এলাকা, যেমন— গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহের শিক্ষার্থীরাও ঢাকাতে কেন্দ্র পছন্দ করছে।’

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা ২০১৯ সালের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঢাকা আসে। তাদের কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকে, আবার কেউ নিজেদের মতো করে বাসা ঠিক করে। অনেক শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শেষে ঢাকার বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়। এরা ঢাকায় পরীক্ষা দেবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

তবে ভর্তিচ্ছুরা ঢাকামুখী থাকলেও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া শতভাগ সফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরীক্ষার্থীরা যেখানেই কেন্দ্র পছন্দ করুক, তাদের অন্তত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একাধিক স্থানে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে না। ফলে অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুদের হয়রানি ও ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকুল আরেফিন বলেন, আমরা প্রথমবার পাঁচটি কেন্দ্র পছন্দের সুযোগ রেখেছিলাম। ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেরই দূরে সিট পড়ছিল। তবে গতবারের মতো এবারও আমরা একটি কেন্দ্র পছন্দের সুযোগ রেখেছিলাম। যে যেখানে পছন্দ করে, সেখানে পরীক্ষা দেবে। মূল কেন্দ্রে জায়গা না হলে কেন্দ্রের পাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে, এটাই ছিল পরিকল্পনা। ঢাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন ঢাকায় থাকেন অনেকেই। তাই সেখানে আবেদন বেশি পড়েছে। এটি অস্বাভাবিক নয়।

গুচ্ছের টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক ও চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. নাছিম আখতার বলেন, ‘আমরা এবার শিক্ষার্থীদের যেখানে পছন্দ সেখানেই পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিয়েছি। প্রথমবার কেন্দ্রের সংখ্যা সংকুলান করতে শিক্ষার্থীদের পাঁচটি পছন্দের যেকোনোটিতে দেয়া হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারের পরীক্ষায় তা করা হয়নি। এত পরীক্ষার্থী ঢাকায় যাওয়ায় চাপ হবে স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে যদি ভোগান্তি হয় ও তারা যদি স্বেচ্ছায় ভোগান্তি নেয়, এটা তাদের বিষয়। আমাদের পক্ষ থেকে ভোগান্তি লাঘবে আমরা শতভাগ সফল। অন্তত আগের মতো শিক্ষার্থীদের সারাদেশে পরীক্ষা দিতে এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে না।’