‘লুটেরা দুর্নীতিবাজ’ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে একটি ঋণের রাজ্যে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম (একাংশ) সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেছেন, ‘বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর কাছে জনগণকে হাজার হাজার কোটি ঋণের টাকায় দায়বদ্ধ করে ফেলেছে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে নির্দলীয় সরকারের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম সভাপতি এসব কথা বলেন। গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির যৌথ কর্মসূচি তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করার কারণে এ দেশের জনগণের আস্থা হারিয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি ও লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়হীনতায় কয়লার সংকট হয়েছে।’
গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘গত দুটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি, আমার ভোট আমিও দিতে পারিনি। আমরা জনগণের সরকার চাই, জনগণের সরকার এলে দুর্নীতি বন্ধ হবে, ঋণখেলাপি বন্ধ হবে, অর্থপাচার বন্ধ হবে ও কয়লার টাকা বাকি থাকা বন্ধ হবে এবং দেশের মানুষ বাঁচবে, মুক্তি পাবে মানুষ।’
মোস্তফা মোহসীন বলেন, ‘একটি প্রতীকের প্রতি এই দেশের জনগণের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তি ভালো হলেও জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মো. বাবুল সরদার চাখারী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বা বিরোধী মতের প্রার্থী বিজয়ী হলেই যে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেই চিন্তার কোনো অবকাশ নেই। আমরা দেখেছি, ২০১৪ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বিরোধী প্রার্থীরা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে বিনা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে আওয়ামী লীগ। তাই দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
লিখিত বক্তব্য পাঠকালে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতিটি স্তরে আজ চরম গণতন্ত্রহীনতা, দুর্নীতি ও দুঃশাসন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। প্রশাসনে চলছে দলবাজির নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা। পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই মুহূর্তে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। চলমান আন্দোলন মাঠপর্যায়ে আরও জোরদার ও তীব্রতর করে জনবিরোধী এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে গণফোরাম ও পিপলস পার্টির ৭ দফা যৌথ কর্মসূচির রূপরেখা ঘোষণা করে। এগুলো হলো-
১. দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
২. (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে।
৩. রাষ্ট্র-ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার সংস্কার করা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে। একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান এবং নির্বাহী প্রধান হতে পারবেন না। একই ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
৪. সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগসহ সব প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
৫. মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং গণতন্ত্র, ভোট দেয়ার অধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৬. সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে।
৭. তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মূল উৎপাটন করতে হবে। খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, সভাপতি পরিষদের সদস্য ফজলুল হক সরকার, আব্দুল হাসিব চৌধুরীসহ অন্যরা।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা