আপডেট : ৮ জুন, ২০২৩ ২২:১৮
বার্সার মায়া ভুলে মায়ামিতে মেসি
ক্রীড়া ডেস্ক

বার্সার মায়া ভুলে মায়ামিতে মেসি

পরশু পুরো দিনের ঘটনাপ্রবাহ প্রায় নিশ্চিত করে বুঝিয়ে দিচ্ছিল, বার্সেলোনায় ফেরা হচ্ছে না লিওনেল মেসির। সৌদি আরবের আল-হিলাল টাকার বস্তা নিয়ে প্রস্তুত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিবারিক-ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় মেসি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিকেই বেছে নিচ্ছেন, সেটিও প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।

প্রায় ছাপিয়ে পুরো নিশ্চিত হতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দরকার ছিল, স্পোর্ত আর মুন্দো দেপোর্তিভোয় দুই সাক্ষাৎকারে সেটি নিশ্চিত তো করেছেনই, মেসি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তার বার্সায় না যাওয়া আর ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার নেপথ্যের কারণের। যা আরেকবার নিশ্চিত করে দিয়েছে, বার্সা সভাপতি হোয়ান লাপোর্তার প্রতি বিশ্বাসে ঘাটতি ছিল মেসির। একে তো অধিকার ছেড়ে দিয়ে আবার ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মেসি, তার ওপর তা করতে হতো অবিশ্বাসে বাঁধা সুতো ধরে চোখ বন্ধ করে ঝাঁপিয়ে।

তা আর করেননি মেসি। বার্সার মায়া ভুলে পাড়ি দিচ্ছেন মায়ামিতে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তো আরও আগেই চলে গেছেন, তারপর ইউরোপের ফুটবলে আর মেসিকেও না দেখার আক্ষেপে ফুটবলপ্রেমীদের পোড়ানো ঘোষণাটা শেষে এসেছে মেসির কণ্ঠেই, ‘আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আমি ইন্টার মায়ামিতেই যাচ্ছি।’

অ্যাপল, অ্যাডিডাসের মতো প্রতিষ্ঠান মেসির প্রচারণা থেকে লাভের অংশ মেসিকে দেয়ার বিনিময়ে মায়ামিতে নিয়ে যাচ্ছে। অবসরের পর মায়ামির ক্লাবের মালিকানার একটি অংশও পাওয়ার সুযোগ থাকছে মেসির। আর্জেন্টাইন সাংবাদিক গাস্তন এদুল জানিয়েছেন, মায়ামিতে চুক্তিটা তিন বছরের হলেও প্রতিবছর শেষেই মেসির হাতে সুযোগ থাকবে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার।

এদিকে মেসির মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বার্সাও বিবৃতি দিয়েছে, তবে সে বিবৃতি বার্সার রুচিবোধ নিয়েই আরও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

মেসি যা বলেছেন

কেন বার্সা নয়

‘খুব করেই চেয়েছিলাম (বার্সায়) ফিরতে। ফেরার ব্যাপারে খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম, কিন্তু এর উল্টো পিঠে মনে হচ্ছিল, আমি ক্লাব ছাড়ার সময় যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তেমন কিছু আরেকবার হোক তা চাই না। আমার ভবিষ্যৎ অন্য কারও হাতে ছেড়ে দিতে ভরসা হচ্ছিল না। আমার পরিবারও বার্সায় ফেরার ব্যাপারে খুব রোমাঞ্চিত ছিল, কিন্তু একই সময়ে আমরা ফেরার ব্যাপারে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। কারণ ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটি আমরা জানতেই পারিনি।

আমি জানতাম লা লিগা (বার্সেলোনার পরিকল্পনা) অনুমোদন করেছে, কিন্তু এর পরও অনেক কিছু করতে হতো। শুনেছি আমাকে নিতে গেলে তাদের কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিক্রি করে দিতে হতো বা কারও বেতন কমাতে হতো। আমার জন্য অন্য কারও এমন কিছু আমি চাই না। বার্সেলোনায় আমার ক্যারিয়ারে এমন অনেক কিছুই আমার ব্যাপারে বলা হয়েছে, যেগুলো সত্যি নয়। সেসব নিয়েই আমি ক্লান্ত, নতুন করে এমন কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে চাই না।

বার্সা প্রস্তাব দিয়েছে?

বার্সেলোনা আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি লিখিত, সই করা, অফিশিয়াল কোনো প্রস্তাব ছিল না। অর্থ এখানে কোনো ব্যাপারই ছিল না। বার্সেলোনার সঙ্গে টাকাপয়সার দাবি-দাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনাই করিনি আমরা। কিন্তু তাদের দিক থেকে লিখিত কোনো প্রস্তাব কখনোই পাইনি আমি। অর্থই মূল ব্যাপার হলে আমি আরবেই যেতাম।

অবিশ্বাস

আমি নিশ্চিত নই এটি (মেসির প্রত্যাবর্তন) ঠিকঠাকভাবে হওয়া নিশ্চিত করতে বার্সা সবকিছু করেছে কি না। শাভি আমাকে যা বলেছে আমি শুধু অতটুকুই জানি। এটিও নিশ্চিতভাবে জানি যে ক্লাবে এমন অনেকে আছে যারা চায়নি আমি বার্সায় ফিরি।

শুধু বার্সাকেই চেয়েছিলেন

ইউরোপের অন্য আরেকটি ক্লাবের প্রস্তাব আমার হাতে ছিল, কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল, ইউরোপে থাকলে বার্সেলোনায়ই যাব।

পিএসজিতে শেষটা সুন্দর নয়

প্যারিসে আমার ক্যারিয়ার শেষ হচ্ছে মিশ্র একটা অনুভূতি নিয়ে। সত্যি বলতে, প্রথম বছরটি বিভিন্ন কারণে খুব কঠিন ছিল। দ্বিতীয় বছরে শুরুটি খুব ভালো হয়েছিল। খুব খুব স্বস্তিতে ছিলাম- ক্লাবে, প্যারিস শহরে। এরপর মৌসুমের মাঝপথে বিশ্বকাপ এল, আর আমার মনে হয় বিশ্বকাপটা ক্লাব মৌসুমের বাকি অংশে প্রভাব ফেলেছে। চেয়েছিলাম শেষটা সুন্দর হোক, কিন্তু এই দুই বছর আমার জন্য কঠিনই ছিল। যা-ই হোক, সেটি এখন অতীত।

কেন সৌদি নয়

অর্থই যদি বিবেচ্য হতো, তাহলে আরব বা অন্য কোথাও যেতাম। টাকার অঙ্কটা সেখানে অনেক বড়ই মনে হয়েছে, তবে সত্যিটা হচ্ছে, আমার সিদ্ধান্তে অর্থ নয়, অন্য কয়েকটি দিক বেশি প্রভাব ফেলেছে।

কেন যুক্তরাষ্ট্র

আমি ক্যারিয়ারের-জীবনের এমন একটি পর্যায়ে চলে এসেছি, যেখানে আমি একটু আড়ালে যেতে চাইছি, আমার পরিবার নিয়ে বেশি ভাবতে চাইছি। গত দুটি বছরে (প্যারিসে) পরিবারিকভাবে খুব একটা ভালো সময় কাটেনি আমার, খুব একটা উপভোগ করিনি। একেকটি দিন আমার পরিবার-সন্তানদের সঙ্গে উপভোগের দিনগুলোতে আবার ফিরতে চাইছি। বার্সেলোনার ব্যাপারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সেটি একটি ব্যাপার ছিল।

এবং পূর্ণতা

ক্যারিয়ারে পূর্ণতা পেতে বিশ্বকাপ ট্রফিটাই শুধু আমার দরকার ছিল।

কোনো একদিন দেখা হবে

অবশ্যই আমি ক্লাবটির (বার্সেলোনা) সঙ্গেই থাকতে চাই। তা ছাড়া আমি (অবসরের পর) বার্সেলোনা শহরেই থাকব। জানি না কখন কীভাবে পারব, তবে আশা করি কোনো একদিন আমি ক্লাবটিতে কোনোভাবে অবদান রাখতে পারব। কারণ এই ক্লাবটিকে আমি ভালোবাসি। কোনো একদিন শাভি, ইয়োর্দি, বুসি, ইনিয়েস্তার মতো বিদায় নিতে চাই ক্লাবটি থেকে।

বার্সার এ কেমন বিবৃতি

একে তো মেসি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের খেলোয়াড় আর নন আরও দুই বছর আগ থেকেই, তাকে ক্লাবে ফেরাতে না পারার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বার্সা কেন দিতে গেছে, সেটিই প্রশ্নসাপেক্ষ। সে বিবৃতিতে ভাষার ব্যবহারও বার্সার রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

বিবৃতিতে মেসির ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার কথা জানিয়ে বার্সা লিখেছে, তারা প্রস্তাব দিয়েছিল মেসিকে। কিন্তু এরপর লিখেছে, ‘মেসি যে কম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, স্পটলাইটের বাইরে থাকা, কম চাপের একটা লিগে খেলতে চাইছেন, সে সিদ্ধান্ত সভাপতি লাপোর্তা বুঝতে পেরেছেন, সম্মান জানিয়েছেন সে সিদ্ধান্তকে।’