টেস্টের শেষ দিন। জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ২৮০ রান। হাতে আছে ৭ উইকেট। ক্রিজে বিরাট কোহলির সঙ্গে আছেন প্রথম ইনিংসে ভারতের ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধের নেতৃত্ব দেয়া আজিঙ্কা রাহানে। দুজনে এরই মধ্যে ১৯ ওভার ২ বলে গড়েছেন ৭১ রানের জুটি। চতুর্থ ইনিংসে যেকোনো রান তাড়া করার জন্য প্রস্তুত বলে আগেই জানিয়েছিল ভারত। যা পরিস্থিতি, তাতে শত বছরের রেকর্ড ভাঙতে হচ্ছে। তা কঠিন হলেও অসম্ভব মনে করছে না রোহিত অ্যান্ড কোম্পানি।
অন্যদিকে শেষ দিনটিতে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ভারতের হাতে থাকা সেই ৭ উইকেট। আগের তিন দিনের বেশির ভাগ সময় ম্যাচের লাগাম ধরে রাখা অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ দিনেও খেলেছে নিজেদের মতোই। দিনের শেষ ভাগে উইকেটে ব্যাটিং একটু সহজ হয়ে এলেও বোলিংয়ে ২১ ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকেই তুলে নিয়েছে। এরপর কোহলি-রাহানে জুটি ভাঙতে না পারলেও পঞ্চম দিনে জয়ের পূর্ণ আশাবাদ নিয়েই অজিরা মাঠে নামবে, তা বলাই বাহুল্য।
চার দিন পেরিয়ে এসে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন তাই রোমাঞ্চকর সমাপ্তির অপেক্ষায়। দুই দলের জন্যই জয়, পরাজয়, ড্র— সম্ভাব্য তিনটি ফলের কোনোটিকেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে ম্যাচে ড্রয়ের তুলনায় ফল বের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ ভারত সারা দিন ব্যাটিং করতে পারলে ২৮০ রান পেরিয়ে যাওয়া অসম্ভব না। অন্যদিকে এই ম্যাচে অজি বোলাররা যেভাবে বল করেছেন, তাতে পঞ্চম দিনের দুই সেশনের মধ্যেই ভারতের বাকি উইকেটগুলো তুলে নেয়াটাও খুব সম্ভব।
এমন রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি উদ্ভবের আগে চতুর্থ দিনের খেলাও হয়েছে জমজমাট। ৪ উইকেটে ১২৩ রান নিয়ে খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়া দিনের শুরুতেই হারায় ‘ডিপেন্ডেবল’ মারনাস লাবুশেনের উইকেট। এরপর অ্যালেক্স ক্যারি আর ক্যামেরন গ্রিনের ১৬ ওভারে ৪৩ রানের প্রতিরোধ।
ম্যাচের ওই সময়ে যখন মনে হচ্ছিল ভারত চেপে ধরছে অস্ট্রেলিয়াকে, তখনই মিচেল স্টার্ককে নিয়ে ৯৩ রানের জুটি ক্যারির, সেটিও মাত্র ২০ ওভারে। বলতে গেলে তখনই ম্যাচকে যথাসম্ভব ভারতের নাগাল থেকে বের করে নেয়ার পথে অজিরা। এরপর ৫৭ বলে ৪১ রান করে স্টার্ক আউট হলে প্যাট কামিন্স ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। তবে ৫ বল খেলে ৫ রান করে আউট হয়ে গেলে আর ইনিংস ঘোষণা করতে দেরি করেননি। ক্যারি তখন অপরাজিত ১০৫ বলে ৬৬ রানে।
ভারতের হয়ে ৩ উইকেট রবীন্দ্র জাদেজার, দুটি করে মোহাম্মদ সামি ও উমেশ যাদবের, আর একটি মোহাম্মদ সিরাজের। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ঘোষণা আসে ৮ উইকেটে ২৭০ রানে। ভারতের সামনে তখন ম্যাচ জিততে চতুর্থ ইনিংসে লক্ষ্য ৪৪৪।
ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা ছিল ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টি ঘেঁষা ফ্লেভারে। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে স্কট বোল্যান্ড হানেন প্রথম আঘাত, তুলে নেন ১৯ বলে ১৮ রান করা শুভমান গিলকে। তবে তাতে ক্যামেরন গ্রিনের বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণভাবে ক্যাচ নেয়ার কৃতিত্বটাই বেশি। দলের রান তখনই ৪১।
এরপর রোহিত শর্মা আর চেতশ্বর পুজারা ৫১ রানের জুটি গড়েন ১৩ ওভারে। নাথান লায়ন বোলিংয়ে এসেই তুলে নেন রোহিতকে। সুইপ শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন রোহিত, পড়েন এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। পরের ওভারেই কামিন্সের বাউন্সারে পরাস্ত হন পুজারা। তার ব্যাটে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বল জমা পড়ে ক্যারির গ্লাভসে। ১ উইকেটে ৯১ থেকে রাতারাতি ৩ উইকেটে ৯৩ হয়ে পড়ে ভারত। বাকি দিনটুকু অবশ্য কোহলি আর রাহানে সামাল দিয়েছেন। পঞ্চম দিনে রেকর্ড রান তাড়ার শুরুটাও করতে হবে তাদেরই।
মারকাটারি টি-টোয়েন্টির যুগেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিবাচক বিজ্ঞাপন ছড়িয়েই দর্শক ধরে রেখেছে। চার দিন ধরে জমজমাট ক্রিকেট উপহার দেয়া ওভাল পঞ্চম দিনেও সমান রোমাঞ্চকর থাকবে— ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা এটুকুই। অস্ট্রেলিয়ার নাকি ভারতের জয়— ওভালে পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই তার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে। বাকি রোমাঞ্চটুকু ওভালের গ্যালারি আর টিভি কিংবা মোবাইলের পর্দাতেই থাকুক।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা