আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:৩৬
আসাম বাড়ি, চাঁদনীঘাট ঘড়ির আদলে সিলেটে বাস টার্মিনাল

আসাম বাড়ি, চাঁদনীঘাট ঘড়ির আদলে সিলেটে বাস টার্মিনাল

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে সিলেটে হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ছবি: দৈনিক বাংলা

দেবাশীষ দেবু, সিলেট

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে সিলেটে হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। যাকে দেশের সবচেয়ে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে বিমানবন্দরের অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে বলেও দাবি তাদের। চলতি বছরের নভেম্বরে এই টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হবে।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আসাম টাইপ’ বাড়ি আর আলী আমজদের ঘড়ির স্থাপনার সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটিয়ে নির্মিত হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। নগরের কদমতলী এলাকায় পুরোনো বাস টার্মিনালের স্থানেই ৮ একর জায়গাজুড়ে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে নতুন বাস টার্মিনালটি। এটি নির্মাণের পুরো টাকাই দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ২০২০ সালে এই টার্মিনালের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে যায়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, গত জুনেই এই বাস টার্মিনালের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এবার বন্যার কারণে এটি আরও কিছুটা বিলম্বিত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হবে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক বাস টার্মিনাল। এতে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায় চৌধুরী গত বুধবার বলেন, ‘টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ। এখন ফিনিশিংয়ের কিছু কাজ করা হচ্ছে। তবে টার্মিনালটি উদ্বোধনের জন্য এখন প্রস্তুতই বলা চলে। আমরা চেষ্টা করছি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাতে। প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া না গেলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। তবে নভেম্বরের আগে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

সিসিক সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিউনিসিপাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় এই টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয়তলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন।

সরেজমিনে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ, যাত্রীদের জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ আসনের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ রয়েছে এখানে।

এই টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক সুব্রত দাশ, রবিন দে ও মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। নকশা প্রসঙ্গে সুব্রত দে বলেন, বাস টার্মিনালের নকশায় সিলেটের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এর নকশা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

জানা যায়, আগে এই টার্মিনাল এলাকা ছিল ভাগাড়। বৃষ্টির দিনে কাদা আর পানিতে একাকার থাকত পুরো এলাকা। আর এলোমেলোভাবে রাখা গাড়ির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হতো যাত্রীদের।

নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এই অংশে ৪৮টি বাস একসঙ্গে থাকতে পারবে। এ ছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের বিশাল হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও নামাজের জন্য আলাদা কক্ষ। পুরুষ-নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী ছয়টি শৌচাগারও থাকবে এখানে।

বাস টার্মিনালে আরও থাকবে রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও ব্রেস্ট ফিডিং জোন। আগমনী ভবনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফুট। এখানে আছে বাস বে, যাত্রীদের জন্য ৫১০ আসনের বসার স্থান ও ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টুরেন্টসহ অন্য সুবিধা।

টার্মিনালের পেছনের দিকের অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকারব্যবস্থা, ক্যানটিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, এই প্রকল্পের স্টিলের টিন আনা হয়েছে তাইওয়ান থেকে। স্টিল স্ট্রাকচারের জন্য লোহার বার আনা হয়েছে চায়না থেকে এবং প্রতিটি জিনিস বুয়েটে টেস্ট করা হয়েছে। এখানে বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে। আছে পার্কিং জোন, পরিবেশের কথা বিবেচনা করে ভবনের পেছনের দিকে থাকবে গাছপালা আচ্ছাদিত গ্রিন জোন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এখানে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা ও যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে।