পাহাড়ের শরীর বেয়ে টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে দেড় শ ফুট ওপর থেকে। নির্জন পাহাড়ের ওপর থেকে পাথরের ওপর আছড়ে পড়া জল শাঁ শাঁ শব্দে বয়ে যাচ্ছে সমতলে। চোখ জুড়ানো এই দৃশ্য উপভোগ করা যায় হাম হাম জলপ্রপাতে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এই ঝরনায় শহুরে যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা পাহাড়প্রেমীরা একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে ছুটে যান। গভীর জঙ্গলের ভেতর এই জলপ্রপাতে পৌঁছানোর প্রতি পদে রয়েছে রোমাঞ্চের হাতছানি। সেই রোমাঞ্চের টানেই পাহাড় ও প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা যান হাম হামে। প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ত এবং ১৩৩ ফুট উচ্চতার এই জলপ্রপাতটি দিন দিন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রীদের এক তীর্থভূমি হয়ে উঠেছে।
২০১০ সালে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক এটি আবিষ্কার করেন। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কমলগঞ্জের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের একটি দল সরেজমিনে হাম হাম পরিদর্শন করে। তবে তাদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবরণ পাওয়া যায়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা সদরের কুরমা বনবিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন হাম হাম জলপ্রপাত। কমলগঞ্জের চৌমুহনা চত্বর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস/জিপ/ মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও বাকি পথ পাহাড়ি এলাকা হেঁটে যেতে হয়। মোটরসাইকেল বা সিএনজি অটোরিকশায় করে আরও ৪-৫ কিলোমিটার ভেতরে সীমান্ত ঘেঁষে ত্রিপুরা আদিবাসীদের পল্লি ও তৈলংবাড়ী পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে জলপ্রপাত ৮ কিলোমিটার দূরে।
চলার পথে দেখা মিলবে অগুনতি চশমা বানরের। এই জলপ্রপাতটিতে যেতে পাহাড়ি ঝিরি ধরে হাঁটতে হয় অনেকটা। ঝিরিপথে পড়বে হাঁটু কিংবা কোমরপানি। আধা কিলোমিটার দূর থেকেই শোনা যায় ঝরনার জলধ্বনি। শুষ্ক মৌসুমে ঝরনার পানি কম থাকলেও বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায়। স্থানীয় আদিবাসীদের ভাষা অনুসারে হাম হাম কথাটির অর্থ হচ্ছে প্রবল বেগে পানি পড়ার শব্দ। এ থেকে এর নাম হাম হাম হয়েছে।
শিক্ষক ঝুলন চক্রবর্তী বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে হাম হামে গিয়েছিলাম। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পিচ্ছিল হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। কিন্তু ভেতরে ঢুকে মন ভরে গেল। পথের কষ্ট রইল না।’
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে অ্যাডভেঞ্চার ধরনের পর্যটনকেন্দ্র। আমাদের চিন্তাভাবনা আছে কাজ করার। আপাতত এখানে উন্নয়নমূলক কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে বনের ভেতর যাতায়াতের উন্নয়নের বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা