তামিম ইকবাল অবসর নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে- খবরটা ধাক্কা হয়ে এসেছে। অবসর ঘোষণার সময়ে তামিমের কান্না আর্দ্র করেছে তার অনেক ভক্তের চোখ। কিন্তু সব ছাপিয়ে গতকাল দিন শেষ হতেই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল, এভাবে হঠাৎ করে তামিমের অবসরে যাওয়ার কারণ কী?
তার বয়স ৩৪ হয়ে গেছে, বলতে গেলে অবসরেরই বয়স। তবে বিসিবির সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কাল বলছিলেন, তামিম চাইলে অন্তত আরও দুবছর খেলে যেতে পারতেন!
এই চোট, ওই চোটে ভুগছেন অনেক দিন ধরেই। মাঠের চেয়ে মাঠের বাইরেই সময় কাটছিল বেশি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গত পরশু প্রথম ওয়ানডেতেই তো নেমেছেন কোমরের চোট সারিয়ে শতভাগ ফিট হওয়ার আগেই, যা কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ভালোভাবে নেননি বলে শোনা যায়। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও কড়া সমালোচনা করেছেন তামিমের।
তার ব্যাটেও ফর্ম সেভাবে ছিল না। গত বছরের জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা দুই ফিফটির পর তামিমের ব্যাটে ১৩ ইনিংসে ফিফটি মাত্র একটি, সেটি বাদ দিলে ৪০-এর ঘর পেরিয়েছেন মাত্র একবার! অথচ এই ১৩ ইনিংসের তিনটি ছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, বাকি ১০টিতে প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু এসব কিছুর পরও তামিমের অবসর ঘোষণার সময়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ হবে অক্টোবরে, সেখানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ ছিল তামিমের সামনে। হেলায় সে সুযোগ হারানোর মানুষ তো তামিম নন!
তার ওপর অবসর ঘোষণা করলেন সিরিজের মাঝপথে এসে। বাকি দুই ম্যাচ না খেলেই অবসরে চলে গেলেন! সিরিজের মাঝপথে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা বিরল নয়, প্রায় সবক্ষেত্রেই খেলোয়াড়রা সিরিজ শেষ করে অবসরে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তামিম অবসরে গেলেন সিরিজের মাঝপথে! তামিম যতই বলুন, অনেক দিন ধরে সিদ্ধান্তটা নিয়ে ভাবছেন। এভাবে সিরিজের মাঝপথে অবসর নেয়া অন্য কিছুর গন্ধ টেনে আনে।
শতভাগ ফিট না হয়েও প্রথম ওয়ানডেতে তামিমের খেলা নিয়ে হাথুরুসিংহে আর পাপনের কড়া সমালোচনার কারণে এভাবে অবসরে গেছেন তামিম? শুনতে বালখিল্য শোনাবে। ব্যাপারটা তেমন নয় আসলে। হতে পারে তাদের সমালোচনা কফিনে শেষ পেরেকের কাজ করেছে। তবে শুধু অতটুকুর জন্য অবসরে গেছেন তামিম, এমন কথা তামিমের ঘোর সমালোচকও বলবেন না। তামিম নিজেই কাল এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বোর্ড সভাপতির কথাগুলো ‘জাস্ট আইসিং অন দ্য কেক।’
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশি এক সংবাদমাধ্যমে তামিমের কথা বাংলাদেশ ক্রিকেটে ‘ক্যানসার’-এর রূপ ধারণ করা দ্বন্দ্বের দিকেই ইঙ্গিত করল! তামিমের কথায় ইঙ্গিত, তার মনে হয়েছে, তাকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব দিলেও বিসিবি সেটি কেড়ে নিয়ে অন্য কাউকে দিতে চেয়েছে। ‘অন্য কেউ’ কে? তা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে প্রসঙ্গত বা অপ্রাসঙ্গিকভাবেও ভাবতে পারেন। উল্লেখ্য, তামিম এতদিন ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন, টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
তামিম আর সাকিবের দ্বন্দ্ব বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই ‘ওপেন সিক্রেট।’ দুজন তারকা, তিন ঘরানার অধিনায়কও। কিন্তু দুজন মাঠে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কথাই বলতেন না! ড্রেসিংরুমে দুজনের দুই ভাগের গুঞ্জন স্বাভাবিকভাবেই ছিল। এই ‘ইগো’র লড়াই-ই কি শেষ পর্যন্ত তামিমের শেষ টেনে দিল? হয়তো!
হ্যাঁ, তামিমের চোট নিয়ে হতাশা ছিল দলে। তামিমের ফর্মহীনতা, ফিটনেসের অভাব, দিনে দিনে পড়তে থাকা স্ট্রাইকরেট, ধীরে-সুস্থে শুরু করে খেলার ধরন নিয়ে সমালোচনা কয়েক বছর ধরেই চলছে। তামিম বেশির ভাগ সময়েই সেসবে গা-করেননি বলে অভিযোগ। এখানেও তো ব্যাপারটা ‘ইগো’রই ছিল!
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা