বরগুনার তালতলীর ফকিরহাট খালের ওপর নির্মিত সোনাকাটা টেংরাগিরি ইকোপার্কের সঙ্গে সংযুক্ত সেতুর কাজ উচ্চতাসংক্রান্ত জটিলতলার কারণে নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় সোনাকাটা ইকোপার্কে ঘুরতে আসা পর্যটকরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
তালতলী উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ফকিরহাট খালের ওপর সোনাকাটা ইকোপার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্থের ১টি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজ পায় আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুটির উচ্চতা ধরা হয়েছে পানির স্বাভাবিক লেভেল থেকে ১০ ফুট উঁচু। ২০২১ সালে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ১ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সেতুর দুই পাড়ের ৪৮ মিটার অ্যাবাটমেন্ট কাজ শেষ করে। মাঝখানের ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ১টি স্প্যান বাকি থাকা অবস্থায় ২০২২ সালের প্রথমদিকে উচ্চতা কম হওয়ায় প্ল্যানিং কমিশন ও স্থানীয় জেলেদের আপত্তির কারণে নির্মাণকাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
এই সেতুর পাশেই সোনাকাটা ইকোপার্কে পর্যটকদের চলাচলের জন্য একটি পুরোনো লোহার সেতু ছিল। গার্ডার সেতু নির্মাণের কারণে সেটিও ভেঙে ফেলা হয়। সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থায় ভোগান্তির কারণে সোনাকাটা ইকোপার্ক পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। কিছু পর্যটক এলেও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করে নৌকার সাহায্যে পারাপার হচ্ছেন।
সোনাকাটা ইকোপার্কে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী রাহিমা, আরিফ ও তানিয়া জানান, সেতুর কাজ বন্ধ। তাই খেয়া নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় বনের ভেতর। এতে ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার শেষ নেই। এভাবে সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ থাকলে এই বনে কেউ আর বেড়াতে আসবেন না।
ছকিনা বিটের ফরেস্টার মো. মোশারেফ হোসেন জানান, সেতু না থাকায় চলাচলের অসুবিধার কারণে সোনাকাটা ইকোপার্ক প্রায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে।
ফকিরহাটের মায়ের দোয়া হোটেল মালিক মো. বাবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘সেতু না থাকায় পারাপারে ভোগান্তি হওয়ায় ইকোপার্কে পর্যটক কমে গেছে। এ কারণে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে।’
স্থানীয় জেলে রিপন মল্লিক ও আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় রয়েছে শত শত জেলে ট্রলার। তারা প্রতিনিয়ত সাগরে মাছ ধরতে যান। দুর্যোগের সময় তারা সাগর থেকে ফিরে নিরাপদ আশ্রয়রে জন্য এই ফকিরহাট খালের ভেতর প্রবেশ করে আশ্রয় নেন। সেতুটির উচ্চতা কম ধরা হয়েছে। এভাবে কম উচ্চতার সেতু নির্মাণ হলে দুর্যোগের সময় খালের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলেদের ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এই সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করতে পারবে না।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম বলেন, ‘সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় আমরা গ্রামবাসী আপত্তি জানিয়েছি। কারণ, সাগর ও খালের পানি বেড়ে যাওয়ার সময় এই সেতুর নিচ দিয়ে কোনো ট্রলার কিংবা নৌযান চলাচল করতে পারবে না। তাদের দাবি, মাঝখানের স্প্যানটি আরও ১০ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হলে জেলে ট্রলার এবং নৌযান স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবে।’
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আমির ইঞ্জনিয়ারিং করপোরেশনের মালিক আমির হোসেন বলেন, ‘এলজিইডির নকশা অনুযায়ী আমি কাজ শুরু করি। মাঝখানের স্প্যানটি নিচু হওয়ার কারণে স্থানীয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আপত্তির কারণে কাজ স্থগিত করে দেয়ায় আমি কাজ বন্ধ রেখেছি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী রাসেল ইমতিয়াজ জানান, নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সেতুর মাঝখানের স্প্যানটির নির্মাণ বন্ধ রাখা হয়েছে। নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে স্টিলের স্ট্রাকচার করে এটির উচ্চতা আরও ৮-১০ ফুট বাড়াতে হবে। এটি নির্মাণের জন্য নতুন নকশা এবং সেনাবাহিনীর টিম প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একটি দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা