ম্যাচ শেষে এমন প্রতিক্রিয়া বিভ্রান্তির জন্ম দিতে পারে। জয়ী অধিনায়ক দলের পারফরম্যান্সে তৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছেন। ওদিকে পরাজিত দলের অধিনায়কও বলছেন, এমন কিছুতেও বেশ খুশি তিনি। অবশ্য বাংলাদেশ আফগানিস্তান সিরিজ অনুসরণ করে থাকলে বিস্ময়ের কিছু নেই। ধবলধোলাইয়ের শঙ্কা পাশ কাটিয়ে দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ওদিকে বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের আনন্দে ব্যস্ত আফগানরা।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ম্যাচে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে ১২৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ২৩.৩ ওভারেই ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে স্বাগতিক দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর, সবচেয়ে বেশি বল (১৫৯) অব্যবহৃত থাকা হারের লজ্জাও জুটেছে আফগানদের।
এমন হারেও অবশ্য আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির খুব একটা ভাবান্তর নেই। গত ৮ বছরে বাংলাদেশের মাটিতে ইংল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনো দল যা করতে পারেনি, সেটা করেছে তার দল, জিতেছে ওয়ানডে সিরিজ। তাই ম্যাচ শেষে তার কণ্ঠে তৃপ্তির সুর, ‘সিরিজের পারফরম্যান্সে খুব খুশি’।
মঙ্গলবারের ম্যাচে প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স ধরে না রাখতে পারার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা আজ ভালো খেলিনি, এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আজ বাংলাদেশ ভালো খেলেছে, শুরু থেকে চাপে রেখেছে।’
শুরু থেকে চাপের যে কাজটা প্রথম দুই ম্যাচে করতে পারেনি বাংলাদেশ, আজ সেটা করে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম। প্রথম দুই ম্যাচে বসে থাকা এই পেসার এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মূল একাদশে তাকে না রাখাটা ভুল হবে।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুই ওপেনারই ২৫৬ রান এনে দিয়েছিলেন আফগানিস্তানকে। আজ তারা এনে দিতে পারলেন মাত্র ৩ রান। ইব্রাহিম জাদরানকে তৃতীয় ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছেন শরীফুল। ওভার শেষ হওয়ার আগেই কোনো রান যোগ না করেই বিদায় নিলেন রহমত শাহ।
স্কোরকার্ডে আরও ১২ রান যোগ করতেই আরও ২ উইকেট নেই। ধস সামলাতে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে মোহাম্মদ নবীকে নামানো হয়েছিল। তিনিও লাইন না বুঝে শরীফুলের বলে এলবিডব্লিউ। আর অন্য দিকে দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক রহমানউল্লাহ গুরবাজকে বাউন্সারে কাবু করেছেন তাসকিন।
অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান একটু সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ১৭ রানে থামল সে জুটি। ৩২ রান ৫ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক শহীদির দিকেই তাকিয়ে ছিল তার দল। কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিতে পারেননি অধিনায়ক। মহাবিপদেও রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন তাইজুলের বলে। ৫৩ রানে ৬ উইকেট নেই আফগানিস্তানের। তখন মনে হচ্ছিল মাত্র চতুর্থবারের মতো এক শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়বে দলটি।
কিন্তু আজমাতউল্লাহ ওমরজাই হাল ছাড়লেন না। দুই অভিষিক্ত আবদুল রহমান ও জিয়াউর-রহমানকে নিয়ে যথাক্রমে ১৫ ও ২১ রানের জুটি গড়লেন। শতরান পার করালেন মুজিব উর রহমানকে নিয়ে ৩৬ রানের জুটিতে। ৭১ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৬ রান করা ওমরজাই ফিরেছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। তখনো ২৮ বল বাকি ইনিংসের। ২১ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন শরীফুল, ২৩ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন তাসকিন।
তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ভালো শুরু পায়নি আজও। তামিমের হঠাৎ অবসর-নাটকের কারণেই হোক বা সিরিজের আগেই নেয়া সিদ্ধান্তে টানা দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আজ ৮ বল খেলেও রানের দেখা না পেয়ে বোল্ড হয়েছেন ফজল হক ফারুকির বলে। নাজমুল হক শান্তও বিদায় নিয়েছেন সপ্তম ওভারে।
২৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় উইকেটে সাকিব ও লিটন গড়েন ৬১ রানের জুটি। জয় নিয়ে শঙ্কার লেশমাত্রও তখন আর নেই। ১৮তম ওভারে সাকিব (৩৯ বলে ৩৯) দলকে ৮৯ রানে রেখে ফিরলেও লিটন ফিফটি করে অপরাজিত ছিলেন।
৬০ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক। পাঁচে নামা তাওহীদ হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ১৯ বলে ২২ রান করে। এমন জয়ে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন লিটন। আগামী শুক্রবার ১৪ জুলাই শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য খুঁজে নিচ্ছেন আত্মবিশ্বাস, ‘এ জয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে ছেলেদের সাহায্য করবে। শরীফুল ও তাসকিন নতুন বলে ভালো কাজ দেখিয়েছে। টি-টোয়েন্টির আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছি।’ সিরিজ হারের সান্ত্বনা ওটুকুই!
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা