ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাওলাগঞ্জ বাজার। স্থানীয়দের দাবি, সপ্তাহের রোববার এখানে যে বাজারটি বসছে, সেটি শতাব্দীপ্রাচীন। বৈচিত্র্যময় সব পণ্যের সম্ভার নিয়ে এই বাজারে একেক দিন বেচাকেনা হয় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকারও বেশি। তবে এই বাজারের বিশেষ পরিচিতি কাঠ বিকিকিনির জন্য। কাঠের হাট বলতে এক নামে পরিচিত মাওলাগঞ্জ বাজারে একেক দিন কাঠই বিক্রি ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার।
প্রায় ৬০ বিঘা আয়তনের মাওলাগঞ্জ বাজার প্রতিবছর ইজারা দেয় উপজেলা প্রশাসন। এই বাজারেই ৬০-৭০ বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় ও আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের কাঠ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও প্রতিবেশী কুমিল্লা ও নরসিংদী এবং আশপাশের জেলার বাসিন্দারাই এই বাজারে কাঠের নিয়মিত ক্রেতা।
বাজারে ঢুকতেই মাঠে কুলা, আনতা, পলো, চালুন, টুকরি, ঝাড়ুসহ বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। বাজারের উত্তর পাশে লুঙ্গি ও তৈরি পোশাকের দোকান, কয়েকটি কামারের দোকান ও কাঠের বাজার। পূর্ব পাশের বিশাল জায়গায় বাঁশ ও মুলির কয়েকটি দোকান বসতে দেখা গেছে। এখানে কাঠের দোকান অন্তত ১০০টি, যেসব দোকান থেকে সুলভমূল্যে কাঠ নিয়ে যান ক্রেতারা।
গত রোববারের হাটে আজম আলী নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সামনে মেয়ের বিয়ে। বিয়েতে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির জন্য ফার্নিচার পাঠাব। তাই মাওলাগঞ্জ বাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার কাঠ কিনলাম। আরও কিছু কাঠ কিনতে হবে। এখানে তুলনামূলকভাবে সস্তাতেই কাঠ কিনতে পেরেছি।
কাঠ বিক্রেতা রুস্তম খন্দকার বলেন, পিরোজপুরের কাঠ খুব ভালো। সেখান থেকে কাঠ এনে বিক্রি করি। তবে কেনা-বেচা আগের মতো হয় না। আগে প্রতি হাটে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। এখন এক লাখ টাকা বিক্রি করাই কঠিন হয়ে পড়ে।
মাওলাগঞ্জ বাজারের ইজারাদার নাজমুল হোসেন বলেন, আশপাশের কয়েক জেলায় এত বড় কাঠের বাজার নেই। ব্যবসায়ীরা দূর-দূরান্ত থেকে কাঠ এনে এখানে বিক্রি করে থাকেন। ক্রেতারাও ভালো কাঠের খোঁজে এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আমরা বাজারের পরিবেশ সবার জন্য ভালো রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি।
মাওলাগঞ্জ বাজারে অন্য সব বাহারি পণ্যের উপস্থিতিও কম না। তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য, তৈজসপত্র, খেলনার মতো পণ্যেও ভরপুর এই বাজার। হাসিল কম হওয়ায় এই বাজারে গবাদিপশুর বিক্রিও রমরমা।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা