মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে একটি বিতর্কিত আদেশ জারির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত করানোর অধিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। এটা ছিল নারী অধিকারকর্মীদের দৃষ্টিতে একটি পশ্চাৎমুখী পদক্ষেপ। সেই হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা নারীর অধিকারের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ওই রুলিংয়ের সারকথা হলো, বিবাহিত-অবিবাহিতনির্বিশেষে সব নারী গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবেন। ২৫ বছর বয়সী একজন একাকী মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই সিদ্ধান্ত দেন। পারস্পরিক সম্মতির সম্পর্কের পরিণামে ২২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কারণ ঘনিষ্ঠ অংশীদারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। সেই পুরুষ শেষ মুহূর্তে বিয়েতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সন্তান ধারণের মানে ওই নারীকে সামাজিক কলঙ্ক ও হয়রানির বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।
ওই নারী আরও বলেন, সন্তান লালনের সামর্থ্য তার নেই। কারণ তিনি কর্মহীন এবং ধনী কোনো পরিবার থেকে আসেননি। তা ছাড়া একা একা একটা সন্তানকে বড় করে তুলতে তিনি মানসিকভাবেও প্রস্তুত নন। দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তিনি গর্ভপাতের অনুমতি পাননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়ে কাঙ্ক্ষিত অনুমতি পেয়েছেন।
ভারতে ১৯৭১ সাল থেকে গর্ভপাতের বৈধতা আছে। তবে বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একপর্যায়ে সরকার গত বছর মেডিকেল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রণয়ন করে, যার আওতায় ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বিভিন্ন বিবেচনায় গর্ভপাতের অনুমতি পান। এ ক্ষেত্রে তাকে ধর্ষণের শিকার, নাবালিকা, মানসিক প্রতিবন্ধী নারী অথবা গর্ভাবস্থায় বিচ্ছেদপ্রাপ্ত বা বিধবা হওয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে।
গর্ভপাতের বিষয়টি নিজ শরীরের ওপর নারীর অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয়া সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কেবল অবিবাহিত হওয়ার কারণে একজন নারীকে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান ধারণের যাতনা থেকে মুক্তিলাভের লক্ষ্যে গর্ভপাতের অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি এক ধরনের বৈষম্য। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এ এস বোপানা ও জেবি পারদিওয়ালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেছেন।
ভারতের নারী অধিকারকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে একজন নারী সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার পাবেন। আদালত এটাও বলেছেন যে একজন একাকী নারীরও যৌনতার অধিকার আছে। ভারতের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা অবশ্যই ব্যতিক্রমী ধারণা।
বৈবাহিক ধর্ষণের মতো বাস্তবতার স্বীকৃতিও রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে। বিচারপতিরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে একজন নারী যদি অনিচ্ছুক যৌনতার ফলে স্বামীর মাধ্যমেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন তার গর্ভপাতের অধিকার থাকা যুক্তিসংগত। তাকে ওই সন্তান জন্ম দিতে ও লালন-পালনে বাধ্য করা যাবে না। কারণ ওই সন্তান গ্রহণে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না, বরং জবরদস্তিমূলক আচরণের মাধ্যমে তার ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা