ভোজ্যতেল সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতায় সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকেছেন ভোক্তারা। এ বাড়তি চাহিদাকে পুঁজি করে এবার সরিষার তেলের দামেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। স্থানভেদে এই তেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
সয়াবিনের বাজারে অস্থিরতার মাঝে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় খোলা সরিষার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে দুবার। করপোরেট কোম্পানিগুলোর বাজারজাত করা সরিষার তেলের দামও এক দফা বাড়ানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে সয়াবিনের অস্থিরতা তৈরির আগে তেলকলগুলোর সরবরাহ করা খোলা সরিষা তেলের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা লিটার। রোজার আগে এর দাম বেড়ে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় গড়ায়। আবার ঘানি ভাঙা তেল রোজার আগে ছিল ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। এখন সয়াবিন তেলের সংকটে চাহিদা বাড়ায় আরেক দফা দাম বাড়ে ঘানিভাঙা সরিষার তেলের। বর্তমানে এই তেল স্থানভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
করপোরেট কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেও সারা দেশে সরিষার তেল বাজারজাত হচ্ছে। সুবিধামতো মিলছে ১০০ গ্রাম, ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম, ১ লিটার ও ৫ লিটারের বোতলেও। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর বাজারে সরবরাহ দেয়া আগের সব স্টক ইতিমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। তাদের ঘন ঘন ছাড়তে হচ্ছে নতুন স্টক। আগে কোম্পানিভেদে প্রতি লিটার বোতলজাত সরিষার তেলের দাম রাখা হতো ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। নতুন করে বাজারজাত করা সরিয়ার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা লিটার।
সয়াবিন তেলের সংকটকে পুঁজি করে কেবল সরিয়ার তেলের দাম বাড়েনি। বাড়তি চাহিদা আঁচ করতে পেরে সারা দেশে দফায় দফায় বেড়েছে সরিষাবীজের দামও। মণপ্রতি সরিষাবীজের দাম উঠে গেছে চার হাজার টাকায়।
এ বিষয়ে তীর ব্র্যান্ডের সরিষা তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা বাড়লে দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তেলের কাঁচামাল হলো বীজ। বাড়তি চাহিদার কারণে সরিষার বীজের দাম বেড়েছে। সরিষা কেনায় বেশি খরচ পড়ায় তেলের দামও বাড়াতে হয়েছে।’
বিক্রেতারা বলছেন, স্বাভাবিক পর্যায়ে দোকানে সরিষার তেল রাখা হয় শৌখিন পণ্য হিসেবে। সাধারণত আচার, চাটনি তৈরিতে এর ব্যবহার হয়। এ ছাড়া ভর্তা খাওয়া বা গায়ে মাখার জন্য আগ্রহীরা সরিষার তেল কেনেন। ফলে সরিষার তেল উৎপাদন এবং সরবরাহ দুই-ই কম।
দেশে সয়াবিন তেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠায় ভোক্তাদের বড় একটি অংশ রান্নার কাজেও সরিষার তেল ব্যবহারে ঝুঁকেছে। ফলে গত এক দশকের বেশি সময় পর এই প্রথম সরিষার তেলের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। স্টক ফুরিয়ে যাওয়ায় ক্রেতার চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ সরিষার দাম ছিল মানভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা বাজারে বা কৃষকপর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা মণ। সরিষার দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে তেলেও। আবার মিলাররাও তেল বিক্রিতে বাড়তি মুনাফার চেষ্টা করছেন। এ কারণে সরিষার তেলের দাম বেড়েছে।
বাজারে বর্তমানে রাঁধুনী, তীর, ফ্রেশ, সুরেশ, পুষ্টি, রূপচাঁদা ছাড়াও কমপক্ষে ২০টি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে অসংখ্য তেলকল রয়েছে, যারা সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করে থাকে। ঐতিহ্যবাহী ঘানিভাঙা সরিষা তেলও বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা