১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে স্মৃতিস্তম্ভে লিপিবদ্ধ করতে ইতিহাসবিদ, গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের বর্ধিত অংশ উদ্বোধন শেষে প্রধান বিচারপতি এ আহবান জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার যে সুফল আমরা ভোগ করছি, এর পেছনে অনেকের রক্ত-আত্মত্যাগ রয়েছে। কিন্তু তাদের সঠিক তালিকা না থাকাতে স্মরণটুকু আমরা করতে পারি না। তাই শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন। ১৯৭১ সালে আমাদের মাটিতে যে বর্বরতা হয়েছে, তাতে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। দুই লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছেন। এক কোটিরও বেশি মানুষ দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে দুর্দশার শিকার হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এই দেশ স্বাধীন করেছেন। আর এখন আমরা সেই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছি। সে জন্য আমাদের দায়িত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা। যাদের ত্যাগ রয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, ১৯৭১ সালে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় জাড়ুয়ার বিলে প্রায় ১২শ লোককে হত্যা করা হয়। এই ইতিহাস অনেকেই জানে না। সেখানে কোনো স্মৃতিসৌধ রয়েছে কি-না, সেটাও আমরা জানি না। অথচ ওইসব শহীদদের রক্তেই আমরা সুফল ভোগ করছি। একই ভাবে খুলনার চুকনগরেও একই দিনে প্রায় ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে ‘না থাকার’ মতো একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। ওই স্তম্ভে সেদিনের গণহত্যায় নিহত অনেক শহীদেরই নাম নেই। তাই চুকনগর ও ঝাড়ুয়ার বিলের মতো গণহত্যায় শহীদ হওয়া মানুষদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে আমি ইতিহাসবিদ-গবেষকদের প্রতি অনুরোধ করবো। আর সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করবো ভালো স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে সেখানে শহীদদের তালিকা লিপিবদ্ধ করতে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি, আমার বাড়ির পাশে একটি গ্রামে একটি জমিদার বাড়িতে পাক আর্মিরা ক্যাম্প করে, তারা যখন চলে যায় সেখানে অনেক লোক মেরে রেখে গেছে। আমি নিজে গিয়ে ৮টি লাশ দেখেছি। কাউকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে, কাউকে গুলি করা হয়েছে। কাউকে জবাই করে রেখে গেছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানার জন্যই আমাদের আজকের এই আয়োজন। আমি বিচারপতি, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অনুরোধ করবো, আপনারা মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতহাস সমৃদ্ধ বই পড়বেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার চেষ্টা করবেন।’
এ সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা